ঢাকা | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সদিচ্ছায় ৯৯.৭৫% মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছছে

amaderodhikarpatra@gmail.com | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫০

amaderodhikarpatra@gmail.com
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫০

 

॥ সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ॥
ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১  : বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ সারা দেশে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের ৯৯.৭৫ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।  
স্বাধীনতার সময় এদেশের ১৫% মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে এই অসামান্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।   
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার সময় দেশের মাত্র ১৫ শতাংশেরও মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল আর ২০০৯ সালে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ।
২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে- আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার উচ্ছাভিলাষী স্বপ্ন দেখে।
কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের এই স্বপ্নই তাদেরকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।  
আর এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশের ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষের বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।
২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াও, যা বর্তমানে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। 
দেশের সকল মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১২ বছর আগের ঘোষণাটিকে স্বপ্ন মনে হলেও, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অধীনে বিদ্যুৎ বিভাগ এই স্বপ্ন প্রায় বাস্তবে রূপ দিয়ে ফেলেছে। 
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর পিতার দেখানো পথ ধরেই বিগত ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশের জ্বালানী খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যাত্রা শুরু করে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ বাসসকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ছিল একটি ঐতিহাসিক দিবস। কারণ ওই দিন বঙ্গবন্ধু সামান্য মূল্যে বহুজাতিক তেল খননকারী কোম্পানি শেল তেল কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ওই সময় বখরাবাদ, তিতাস, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর জন্য মাত্র ১৭ কোটি থেকে ১৮ কোটি টাকা দিতে হয়েছিল।
বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকালে জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক খন্দকার আব্দুস সালেক সুফি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে- দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য টেকসই জ্বালানী খাত অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরো বলেন, ‘বিওজিএমসি (পরবর্তীতে বিওজিসি ও বিএমডিসি), বিপিডিবি ও বিডব্লিউডিবি প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক চিন্তা চেতনার ফসল।’বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ছিল তাঁর কথায়- ‘সোনার বাংলার সোনার ছেলেরাই’ পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও উত্তোলন করবে।
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সুযোগ্য কন্যা ও বাংলাদেশের দূরদর্শী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সুফি আরো বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইওসি থেকে পাঁচটি প্রধান গ্যাসক্ষেত্র জাতীয়করণ করে সমুদ্র উপকূলে পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধান শুরু করেন। এছাড়াও তিনি এই খাতের উন্নয়নে তাঁর উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেন।
২০১০ সাল থেকে সরকার ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানী নিরাপত্তা দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে।  
আওয়ামী লীগ সরকারের একক প্রচেষ্টা দেশের সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী পালন করছে। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বছরেই প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশ এখন প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকালে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার খুব কাছে পৌঁছে গেছে এবং ‘মুজিব বর্ষের’ মধ্যেই দেশটি এই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমত, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই- যিনি বিদ্যুৎ খাতকে দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।’
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু কয়লা ও কঠিন পাথর আহরণ শুরু করেছিলেন। তিনি আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন, আলজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জ্বালানী ও বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জার্মানীর সাথে চুক্তি করেন।          
পাওয়ার সেল ডাটা অনুয়ায়ী, ২০০৯ সালে মাত্র ১.৮০ কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল আর বর্তমানে ৪.১৪ কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। তার মানে এই সময়ে মধ্যে বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সিস্টেম লস হ্রাস করার লক্ষে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য পিডিবিকে কয়েকটি সংস্থায়  বিভক্ত করা হয়।
২০০১ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু, একই বছর বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসে এবং ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই যেসব দুর্গম এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রয়েছে সেখানে হোম সোলার সিস্টেম ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি স্থাপনসহ সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এর আগে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মংসুয়েপ্রু চৌধুরী বাসসকে বলেন, পাহাড়ি মানুষের জীবনের সর্বস্তরে উন্নয়নের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে অসামান্য উন্নয়ন কর্মকা- হচ্ছে।       
বর্তমানে দেশে ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে পরিবেশ-বান্ধব নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৭৩০.৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা এসআরইডিএ’ল আওতায় দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনের সক্ষমতা ৭৩০.৩২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সোলার পাওয়ার বা সৌর বিদ্যুৎ থেকে আসছে ৪৯৬.৩৯ মেগাওয়াট।
সরকার সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে দুই কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে।

বাসস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: