odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 12th November 2025, ১২th November ২০২৫

”শব্দের কারনে স্কুলের পাঠদান কষ্টকর হয়ে উঠেছে”

| প্রকাশিত: ২৮ February ২০২২ ০৭:২০


প্রকাশিত: ২৮ February ২০২২ ০৭:২০

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: মাইকিং, গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন এবং নির্মান কাজের অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারনে স্কুলের কার্যক্রম চালাতে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এই অভিযোগ করেন রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক পদ্দুত কুমার দাস।

প্রকল্পটির মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রতিটি জেলা শহরে শব্দ মাত্রা পরিমাপের বিষয়ে সমীক্ষা ও সচেতনতামূলক মতবিনিময় করছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন পরিবেশ অধিদফতর। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করছে ই কিউ এম এস কনসাল্টিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মিতা রানী দাসের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেনঅতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহাবুর রহমান শেখ। প্রকল্প সম্পর্কে সার্বিক ধারণা প্রদান করেন, ক্যাপস এর গবেষনা পরিচালক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর প্রভাষক আবদুল্লাহ আল নাঈম।

সভায় বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ ফারুক, শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালযের সহকারী চায়না সাহা, সরকারী গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষক জহুরুল ইসলাম, জেলা পরিবহন শ্রমকি ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিন্টু, রেডক্রিসেন্ট প্রতিনিধি শারমিন আক্তার, রিক্সা ভ্যান শ্রমকি নেতা আব্দুল ওহাব সরদারসহ ও সুধিজন উপস্থিত ছিলেন।

পদ্দুত কুমার দাস বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ নেয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। মাইকিংয়ের সময় নির্দিষ্ট করা এবং স্কুল এলাকায় হাইড্রোলিক হর্ণ পুরোপুরি বন্ধ না করলে অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারনে স্কুলের কার্যক্রম চালানো  চরম কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

প্রধান অতিথি বলেন, রাস্তায় গাড়ি ‍উল্টোদিকে চালানোর কারনে বেশি উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজাতে হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর ড্রাইভারকে নিয়ে সচেতনতামূলক এরকম সভা বেশি বেশি করতে হবে। একই সঙ্গে নির্মান কাজের উচ্চ শব্দও নিয়ন্ত্রনে আনার ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের জনস্বার্থেই।

মিতা রানী দাস বলেন, সবাই সচেতন হলে শব্দদুষণ নিয়ন্ত্রণ নয়, অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব। এখন যেমন যানবাহনের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বেড়েছে অদক্ষ্য ও অশিক্ষিত চালক। যারা হর্ণের ব্যবহার কোথায় করতে কবে জানেন না। ফলে প্রতিনিয়তই শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। এছাড়া বর্তমানে সভা সেমিনারসহ অন্যান্য প্রচারনায় মাইক ব্যবহারে শব্দদূষণ বাড়ছে। সারা রাত-দিন সব সময় উচ্চস্বরে মাইকিং করে প্রচারনা করছে। তাছাড়া বর্তমানে বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে সাউন্ড সিস্টেম। যা শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। এবং বিভিন্ন কল কারখানার মেশিনেও শব্দদুষণ হচ্ছে। এসব শব্দদূষণের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন। তাই প্রশাসন কঠোর হবার পাশাপাশি সকলস্তরের মানুষের সচেতনতা জরুরী।

তিনি আরো বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসন এককভাবে এই শব্দ দূষণ বন্ধ করতে পারবে না। সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করলে উচ্চ শব্দের যন্ত্রণা থেকে বাঁচা যাবে।

জেলা পরিসংখ্যান অফিস কর্মকর্তা হারুন অর রিশদ বলেন, উন্নত দেশে কথা বলার ধরনটাই আলাদা। সবাই আস্তে কথা বলতে অভ্যস্ত। আমাদের দেশে চিত্র সম্পূর্ন উল্টো। আর অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দের মাইকের ব্যবহার বন্ধে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

রিক্সা ভ্যান শ্রমকি সভাপতি আব্দুল ওহাব সরদার বলেন, রাজবাড়ীতে মোটর বাইকের শব্দ সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালের রোগীরা এ থেকে নিস্তার পাচ্ছে না।

শারমিন আক্তার বলেন, জেলা শহরে রাস্তায় হাঁটা বড় দায়। গাড়ীর হর্নের কান জালাপালা হয়ে যায়। আর অনুষ্ঠা হলে তো শব্দের যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই।  

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত টিম রাজবাড়ী শহরে শব্দদূষণের মাত্রা জানতে ৫ স্থানের সাউন্ড লেভেল মিটার স্থাপন করে। জেলা শহরের নিবর এলাকা হিসাবে সদর হাসপাতালের সামনে, আবাসিক হিসাবে সার্কিট হাউজ এলাকা, বাণিজ্যিক হিসাবে শহরের প্রধান ও গোল চত্তর গুলো মিশ্র হিসাবে, পৌর বা প্রশাসক কার্যালয় এলাকা এবং বিসিক এরিয়াকে শিল্প এলাকা হিসাবে সনাক্ত করেছেন। এসব এলাকার ৫টি স্থানে ২৪ ঘন্টা (দিবা ও রাত্রিকালীন)`র জন্য সাউন্ড লেভেল মিটার বসিয়েছেন। বিধিমালা অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিবা এবং রাত ৯টা থেকে পরবর্তীদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত রাত্রিকালীন সময়। এ মেশিনটি প্রতি এক মিনিট পরপর তথ্য দেবে। যার মাধ্যমে শব্দদূষণের মাত্রা জানা যাবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: