odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 12th November 2025, ১২th November ২০২৫

সিরাজদিখানে নদীর পানির তীব্র স্রোতে বসতবাড়ি বিদ্যুতের খুঁটি নদী গর্ভে বিলীনের শংকা 

| প্রকাশিত: ২৩ April ২০২২ ০৬:৪৩


প্রকাশিত: ২৩ April ২০২২ ০৬:৪৩

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: দেশের নদ নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ধলেশ্বরী নদীর পানির তীব্র স্রোতের ১৫টি বসতবাড়ি ও ২টি ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের ডাকেরহাটি ও গোয়ালখালি এই দুটি গ্রামের প্রায় ১৫টি বাড়ির ভাঙার অংশ রয়েছে। হুমকির মুখে আরো প্রায় ৫০টি বাড়ি। এতে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে। অনেক পরিবার তড়িঘড়ি করে তাদের ঘরবাড়ি অন্য অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকায় কোন ধরণের সাহায্য পাচ্ছেন না বলে ভাঙন কবলিত মানুষের অভিযোগ করেছেন।  

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর পানির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনে দিশেহারা তুলসীখালী ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গোয়ালখালি ও ডাকেরহাটি গ্রামের মানুষ। এতে গত দুই বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন ফসলি জমি, বসতবাড়ি, দুইটি ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি। প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙন কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তাই গ্রামবাসীরা বলছে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন আমাদের দিকে নজর দিচ্ছে না। সরকারের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

জানা যায়, গত বছরে প্রায় ৫০টির  উপরে ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা সরেজমিনে দেখেও কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।  ক্ষতিগ্রস্থ ডাকেরহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদ খান বলেন, আমার ৩৪ শতাংশ জমির ৩১ শতাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যতটুকুও রয়েছে এই বর্ষায় থাকবে না মনে হচ্ছে। আমাদে দেখার কেউ নাই। দু'বছর যাবত নদী ভাঙন হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কেউ দেখতেও একবার আসলো না। ডাকেরহাটি গ্রামের আরেকজন বাসিন্দা মো.ইকবাল খান বলেন, আমাদের গ্রামের মোনায়েম খান একজন প্রতিবন্ধী তার বাবার রেখে যাওয়া বসতবাড়িটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তার আর কোনো সম্পদ নেই। এখন নদী যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তার বাড়িটিও শীঘ্রই নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। তাই প্রশাসনের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তা না হলে মোনায়েম খানের বাড়িটি রাখা যাবেনা। সে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। 

আরেকজন সফর আলী বলেন,নদীতে পানির স্রোত বাড়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছি আমরা। বসত ভিটাসহ সবই নদীতে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর বড় বড় পাড় ভেঙে পড়ছে। গত বছর অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে গ্রামটি রয়েছে। গৃহিণী রাজন বেগম বলেন,এখনো বর্ষা মৌসুম শুরু হয় নাই এরমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নদী ভাঙনের তীব্রতা। গত বছরও প্রশাসনের লোকজন এসে দেখে গেছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার শুরু হয়ে গেছে ভাঙন। কিন্তু এবারও কোনো পদক্ষেপ কি তারা নিবে না । আসলে আমাদের পোড়া কপাল, তাই এই নদী ভাঙন ছাড়ছে না। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নদীর গর্ভে আমাদের জায়গা বিলীন হয়ে যাবে। চিত্রকোট ইউপি ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বার) শহীদুল খান বলেন, গত বছর বহু মানুষের ঘর দুয়ার নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে অনেক মানুষের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড এই এলাকাগুলো দেখে মেপে গেছে। কিন্তু তারা আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনেকের ঘর দুয়ার ভেঙে যাওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেব সহ আমরা অনেককে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছি এবং চেয়ারম্যান সাহেব নদী ভাঙন রোধে বাঁশ দিয়ে অনেক স্থানে বাধ নিয়েছে। তারপরও যেহেতু ভাঙন শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শরিফুল আলম তানভীর বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আপনার মাধ্যমে জানলাম, তবে আমি সরেজমিন দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সিগঞ্জ জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধলেশ্বরীর তীরে বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙনের তথ্য রয়েছে। এবারও আমরা নদী ভাঙন রোধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমাদের তথ্য মতে চারটি স্থান রয়েছে যেখানে নদী ভাঙন জুন মাসের দিকে দেখা দেয়। আমরা জরুরী তৎপরতার অংশ হিসেবে জিআই ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করি। তবে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: