11/05/2025 গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশনকে সহযোগিতার আশ্বাস সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের
odhikarpatra
১৯ December ২০২৪ ২৩:৫৯
গণমাধ্যমকে স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ এবং শক্তিশালী করার লক্ষে সংস্কারের উদ্যোগের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং সংস্কার বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
তারা আশা প্রকাশ করেন যে, কমিশন ফ্যাসিবাদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করে গণমাধ্যমকে সত্যিকার অর্থেই গণমানুষের মাধ্যমে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হবে।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সাথে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কমিশনের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের ১৫ বছরে অনেক মানুষ গুম হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে সেগুলো সংবাদ গণমাধ্যমে লেখা হয়নি। গণমাধ্যম গণমানুষের হতে পারেনি। এ গণমাধ্যম কোনো কোনো দলের প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছিলো। আস্থা ও সংকটের কারণে বিজ্ঞাপন কমে গেছে।
সরকার মিডিয়াকে যেন নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো পত্রিকা ২ হাজার কপিও ছাপা হয়না অথচ ১ লাখ/২ লাখ সার্কুলেশন দেখানো হয় বিজ্ঞাপন বিলের জন্য। তিনি এগুলো বন্ধের আহবান জানান।
তিনি এ সময় সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার হস্তক্ষেপ এবং ফোনে আড়িপাতা বন্ধ করার অনুরোধ করেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে দানবে পরিণত করার জন্য গণমাধ্যমগুলো দায়ী। কোন কোন গণমাধ্যম এ ভুমিকা পালন করেছে, তার চিত্র আছে কিনা তা পরিস্কার করা দরকার। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। গণমাধ্যমের মালিক/প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির মধ্যে রাখা দরকার।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, ভুরি ভুরি পত্রিকা বের হচ্ছে তাদের কোন অবকাঠামো নেই, অথচ সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে বিজ্ঞাপন বিল বেশী নিচ্ছে। প্রেস কাউন্সিলের সংস্কার ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
ঢাকা সাব এডিটর্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল খান বলেন, প্রেস কাউন্সিল শক্তিশালী থাকলে গণমাধ্যম সংস্কারের প্রয়োজন হতো না। বেতন কাঠামো পরিবর্তন ও শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন থাকা দরকার। অসুস্থ ও পঙ্গু সাংবাদিকদের পূর্নবাসন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচার নীতিমালার আওতায় আনার বিষয়ে তিনি মত দেন।
ঢাকা সাব এডিটর্স কাউন্সিলের সভাপতি মুক্তাদির অনিক বলেন, সাংবাদিকদের কমপক্ষে ডিগ্রী পাশ থাকা প্রয়োজন। ক্যামেরাম্যান এবং মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা বলেন, নারী সাংবাদিকরা বেতন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এবং বয়সের কারণে সব সময় বৈষম্যের স্বীকার হয়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রোজী ফেরদৌসী নারী সাংবাদিকদের বৈষম্যের বিষয় উল্লেখ্য করে বলেন, একজন নারী সাংবাদিক ৩৭ বছর চাকরি করার পর তার বেতন ৫০ হাজার টাকা অথচ একজন পুরুষ সাংবাদিকের বেতন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ বলেন, ফটো সাংবাদিকদের নিয়োগে চরম অনিয়ম করা হয়। মোটরসাইকেল ও নিজস্ব ক্যামেরা না থাকলে নিয়োগ হয় না। ফটো সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিলেও তাদের ঝুঁকি ভাতা নেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ৯০ দিন যথেষ্ট নয়। এই সংস্কার কমিশন স্থায়ী হওয়া প্রয়োজন। ট্রেড ইউনিয়ন বাধ্যতামূলক করা দরকার। প্রেস কাউন্সিল, ডিএফপি, পিআইডি ও পিআইবি'র সংস্কার করা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ এর সঙ্গে এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, সৈয়দ আবদাল আহমদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ, টিটু দত্ত গুপ্ত এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন।