11/15/2025 দিনাজপুরে প্রথম বারের মত চাষ হচ্ছে টিউলিপ, ফুল ফোটার অপেক্ষায় এলাকাবাসী
odhikarpatra
৩০ January ২০২৫ ১৩:৩৬
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে প্রথমবারের মতো শীত প্রধান দেশের টিউলিপ ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা হাসিনুর রহমান চৌধুরী (৩৫)। তার বাগানে এখন ফুটেছে হলুদ রঙের টিউলিপ ফুল।
জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা হাসিনুর রহমান চৌধুরী বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, এবছর প্রথমবারের মতো টিউলিপ ফুলের বাগান করেছি। দিনাজপুরেও এটাই প্রথম টিউলিপ বাগান। তাই ফুল ফোটার খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে এই বাগানে। জেলায় ফুলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে নিবিড় পরিচর্যার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে টিউলিপ বাগানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরের বিরলে কয়েকজন চাষি আছেন যারা গাঁদা ও গোলাপ ফুল চাষ করেন। এর পাশাপাশি নশিপুর এলাকায় চাষ হয় রজনীগন্ধা ফুলের। কিন্তু এর আগে কোথাও টিউলিপ চাষ হয় নি।
চলতি বছর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার হাসিনুর রহমান চৌধুরী বন্ধুগাঁও এলাকায় তার দুই শতাংশ জমিতে ৫ রঙের টিউলিপ ফুলের চারা রোপণ করেছেন। এই মধ্যে হলুদ রঙের টিউলিপ ফুটেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার এক ভাতিজা তাসিকুল আলম তপু পঞ্চগড়ে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। সে পঞ্চগড়ে টিউলিপ চাষ করতে দেখে আমাকে উৎসাহিত করে। তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে সেখান থেকে প্রতিটি চারা ১০০ টাকা দরে ৫০০ চারা ক্রয় করি। সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছি। শীত মৌসুম দীর্ঘায়িত না হওয়ায় টিউলিপ ফোটাতে তেমন একটা কষ্ট হয়নি। চারা রোপণের ১৩ দিন পরেই হলুদ রঙের টিউলিপ ফুল ফুটেছে।’
হাসিনুর জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাকি সব গাছে টিউলিপ ফুটবে। আসছে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে টিউলিপ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এলাকাবাসীও আছেন তার বাগানের সব ফূল ফোটার অপেক্ষায়।
টিউলিপ ফুল চাষের জমি প্রস্তুত প্রণালীর বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ইউটিউব থেকে টিউলিপ ফুল চাষের পদ্ধতি সংগ্রহ করেছি। ওই পদ্ধতি অনুসরণ করে আমি প্রথমে জমি প্রস্তুত করি। সমতল জমির চেয়ে একটু উচুঁ জমি টিউলিপ ফুল চাষের জন্য উপযোগী। প্রথমে জমি চাষ করে ওই জমিতে পানি সেচ দিয়ে গোবর সার এবং রাসায়নিক ইউরিয়া ও ডিওপি সার দিয়ে জমির মাটি উর্বর করে নিতে হয়। এরপর প্রস্তুত করা জমিতে টিউলিপ ফুলের চারাগুলো রোপন করা হয়।
হাসিনুর বলেন, সপ্তাহে দু'দিন সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাবধানতার সাথে আমি নিজে এবং দু'জন নির্ধারিত শ্রমিক নিয়ে এখন পর্যন্ত টিউলিপ বাগানের নিয়োমিত পরিচর্যা করে আসছি। উৎসুক লোকজন টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে আসলেও বাগানের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাগানের চারদিকে বেড়া দেওয়া রয়েছে। টিউলিপ বাগান খুব সাবধানতার সাথে আমি নিজেই পরিচর্যা করছি। এছাড়াও তিনি টিউলিপ চাষের জন্য বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান।
তিনি আরো জানান, ৫'শত চারা কিনতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি বাঁশ, বেড়া, পলিথিন ও আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এখন দু'জন শ্রমিক কাজ করছেন।
হাসিনুর বলেন, ‘এবার পুরোপুরি সফল হতে পারলে আগামীতে এখানে ৫ একর জমিতে টিউলিপ চাষ করবো। এর মধ্যে আমার টিউলিপ বাগান দেখতে মানুষ ভিড় করছেন। তবে পরিচর্যা ও নিরাপত্তার জন্য এখনো কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৫ প্রজাতির চাষ হচ্ছে এখানে। আমি নিজেই সার্বিক ভাবে এটি তদারকি করছি। ভবিষ্যতে টিউলিপের চাষ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, হাসিনুর রহমানের দুই শতক জমির বাগানে সারি সারি টিউলিপ গাছ। গাছে গাছে ফুটেছে হলুদ রঙের টিউলিপ। ওপরে পলিথিন ও ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সূর্যের আলো। নিচে মাটিতে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), স্ট্রং গোল্ডসহ (ইয়েলো) অ্যাড রেম (অরেঞ্জ) এবং মিল্কশেক (লাইট পিংক) প্রজাতির টিউলিপ। এখন শুধু ফুল ফোটার অপেক্ষা।
বোচাগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব রহমান বলেন, ‘টিউলিপ চাষের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তরুণ উদ্যোক্তা হাসিনুর রহমান চৌধুরীকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি দক্ষতার সাথেই টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার শাহা বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে টিউলিপ ফুলের চাষ করছেন জেনে আমরা আনন্দিত। এর মধ্যে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আমি সম্প্রতি ওই টিউলিপ ফুলের বাগান পরিদর্শন করেছি। উদ্যোক্তা হাসিনুর রহমান ইউটিউব থেকে টিউলিপ ফুল চাষের পদ্ধতি সংগ্রহ করে ওই পদ্ধতি অনুযায়ী টিউলিপ চাষ করছেন। এর সাথে আমরাও তাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। সেগুলো তিনি তার বাগানে কাজে লাগিয়েছেন। ফলে তিনি এখন টিউলিপ ফুল চাষে সফল।
\ রোস্তম আলী মন্ডল \
বাসস