আরামদায়ক বালিশটি নীরবে ধ্বংস করছে আপনার ঘাড়, আর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখিয়েছেন জাপানের খ্যাতনামা গবেষক ডা. তানাকা।

আপনার প্রতিদিনের ঘুম আরামদায়ক করা বালিশটি কি আসলেই আপনাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে? জাপানের খ্যাতনামা ব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা. তানাকার নতুন গবেষণা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে। তাঁর মতে, সাধারণ বালিশ নীরবে ধ্বংস করছে ঘাড়, কাঁধ ও উপরের পিঠের পেশি। ডা. তানাকার গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাড় ও কাঁধের গুরুত্বপূর্ণ ট্রাপিজিয়াস মাংসপেশি রাতভর বিশ্রাম পাচ্ছে না। বরং এটি টানা টেনশনের মধ্যে আটকে থাকে। তিনি বলেন, দিনের বেলা আপনি কি ৮ ঘণ্টা ধরে ঘাড় বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন? ঠিক তাই ঘটছে প্রতিরাতে আপনার বালিশের কারণে।

ডা. তানাকার ভাষায়, এক সাধারণ বালিশ শুধু ঘাড় ব্যথা নয়, পুরো উপরের পিঠে ব্যথার শৃঙ্খল সৃষ্টি করে। প্রথমে ঘাড়ে টান অনুভূত হয়, এরপর কাঁধ ও উপরের পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। এই টান রক্তপ্রবাহও বাধাগ্রস্ত করে, ফলে পেশি ধীরে ধীরে ক্লান্ত ও ব্যথাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ও কাঁধ ব্যথা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি, ঘুম তাজা না লাগা, অকাল বার্ধক্য। ভুল বালিশের ব্যবহার মারাত্মক মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এসব মাইগ্রেন শুধু মাথাব্যথা নয়, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা, বমি ভাব এবং আলোতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। ডা. তানাকা বলেন, ভুল বালিশ শুধু ব্যথাই সৃষ্টি করে না, মারাত্মক স্নায়বিক সমস্যারও সূচনা করে। ডা. তানাকার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা অনুসারে, চিকিৎসা খাত অনেক রোগীর ভোগান্তি থেকে অর্থ উপার্জন করছে। প্রতি ভিজিটে খরচ পড়ে ৬০–১২০ ইউরো। বছরে খরচ হয় প্রায় ৩,০০০–৬,০০০ ইউরো। এদিকে, আসল সমস্যা বালিশ প্রতিদিন শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডা. তানাকার গবেষণা আমাদের শিখিয়েছে যে, সঠিক বালিশ বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের মান উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য ঘাড় ও কাঁধকে সমর্থন দেওয়া বালিশই প্রয়োজন।

ডা. তানাকা (Dr. Tanaka) একজন জাপানি পেইন এক্সপার্ট হিসেবে ঘাড় ও মেরুদণ্ড সংক্রান্ত সমস্যায় বালিশ ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার পরামর্শগুলো মূলত ঘাড়ের স্বাভাবিক অবস্থান এবং মেরুদণ্ডের সঠিক সাপোর্ট নিশ্চিত করার ওপর ভিত্তি করে। এখানে সংক্ষেপে তার মূল ধারণা: ঘাড়ের প্রাকৃতিক কার্ভ অনুযায়ী বালিশ নির্বাচন। ঘাড় সামান্য বাঁকা থাকে (cervical lordosis)। বালিশ এমন হওয়া উচিত যাতে ঘাড়ের এই বাঁক ঠিকঠাক সমর্থিত থাকে। খুব পাতলা বা খুব উঁচু বালিশ ঘাড়ের স্বাভাবিক অবস্থাকে বিকৃত করতে পারে। মাথার সমর্থন মাথা সরাসরি মেরুদণ্ডের লাইনের সাথে aligned থাকা উচিত। কাত হয়ে বা পিছনে হেলে থাকা মাথা ঘাড়ের পেশীতে চাপ বাড়ায়। বালিশের ধরন মেমোরি ফোম বা নরম ল্যাটেক্স বালিশ ভালো হতে পারে কারণ এগুলো মাথা ও ঘাড়ের আকার অনুযায়ী ফিট হয়। খুব নরম বালিশ বা প্লাশ বালিশে মাথা খুব ডুবে যেতে পারে, যা ঘাড়ের ব্যথার কারণ হতে পারে। ঘুমানোর পদ্ধতি অনুযায়ী বালিশের অবস্থান। পিঠে শোয়া: ঘাড়ের নিচে পাতলা বালিশ বা গলার পাশে সমর্থন থাকা ভালো। পাশে শোয়া: কাঁধের প্রস্থ অনুযায়ী বালিশের উচ্চতা ঠিক করা উচিত, যাতে মাথা মেরুদণ্ডের লাইনে থাকে। পেটের উপর শোয়া: সাধারণত এ অবস্থায় ঘাড়ের চাপ বেশি থাকে, তাই খুব পাতলা বা কোনও বালিশ না ব্যবহার করাই ভালো। বালিশের সামঞ্জস্যযোগ্যতা কিছু বালিশের উচ্চতা বা ঘনত্ব পরিবর্তনযোগ্য, যা ব্যবহারকারীর ঘাড়ের আকার ও আরামের সঙ্গে মিলিয়ে সামঞ্জস্য করা যায়। সংক্ষেপে, ডা. তানাকার মতে, বালিশের কাজ হলো ঘাড়ের প্রাকৃতিক কার্ভ সমর্থন করা এবং মাথা মেরুদণ্ডের সাথে aligned রাখা, যাতে ঘাড়ে বা পিঠে চাপ না পড়ে।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)