12/04/2025 আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকার কতটা দিতে আগ্রহী
odhikarpatra
৩ December ২০২৫ ২৩:০৫
অধিকারপত্র ডটকম এর বিশেষ সম্পাদকীয়
ঢাকা | ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর এলেই আমরা প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করি। সেমিনার হয়, পোস্টার লাগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহানুভূতির লেখা ভেসে বেড়ায়। কিন্তু দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি থেকেই যায়—রাষ্ট্র ও সমাজ হিসেবে আমরা সত্যিই প্রতিবন্ধী মানুষকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দিতে কতটা আগ্রহী?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের তাকাতে হবে সরকারি পরিসংখ্যান, জাতিসংঘের সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধান—এই তিন জায়গায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) সর্বশেষ জাতীয় জরিপ অনুযায়ী—
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা বাস্তবতার চেয়ে অনেক কম। কারণ—
অলিখিত হিসাবে দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রকৃত সংখ্যা ৯০–১০০ লাখের কাছাকাছি হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (UNCRPD)–এ বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী দেশ। এই সনদ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষ—
স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—প্রতিবন্ধকতা ব্যক্তির সমস্যা নয়; প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সমাজ ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থা।
বাংলাদেশের সংবিধান সরাসরি “প্রতিবন্ধী” শব্দ ব্যবহার না করলেও মৌলিক অধিকারগুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য—
এই অনুচ্ছেদগুলোর আলোকে প্রতিবন্ধী ভাতা, শিক্ষা সহায়তা ও কোটা ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী—
কারণ—
বিদ্যালয়ের দরজায় বাধা থাকলে “শিক্ষার অধিকার” শুধু কাগজেই থাকে।
আইন ও নীতিতে চাকরির কোটা থাকলেও—
অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী পরিচয়টাই হয়ে যায় অদৃশ্য দেয়াল।
অধিকার যেখানে মৌলিক, সেখানে সহায়তা হয়ে যাচ্ছে দয়ার বিষয়।
আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে সত্য কথাটি হলো—
সমস্যা আইন বা সনদের অভাব নয়, সমস্যা রাষ্ট্র ও সমাজের আগ্রহের অভাব।
এসব প্রমাণ করে—আমরা এখনও প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্পূর্ণ নাগরিক হিসেবে ভাবতে শিখিনি।
প্রতিবন্ধী মানুষ করুণা চায় না,
তারা চায় আইনে লেখা নিজের অধিকার।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস আমাদের সামনে একটাই প্রশ্ন রেখে যায়—
আমরা কি শুধু দিবস পালনে আগ্রহী, নাকি সত্যিই প্রতিবন্ধী মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে প্রস্তুত?
এই প্রশ্নের উত্তর দিবস নয়, দেবে আমাদের প্রতিদিনের কাজ।