
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নারায়ণগঞ্জের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে গাজীপুর।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, গাজীপুরে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সেখানে আক্রান্তের হার প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি। আজকের তথ্য মতে গাজীপুরে আক্রান্তের হার ১৯.৫ শতাংশ।
গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ এ পর্যন্ত জেলাটিতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৯ জন। এর মধ্যে সবশেষ এক দিনে আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ জন।
এ পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৯ জনকে। আর হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৩৫৮৩ জন।
ডা. খায়রুজ্জামান জানান, তিনি নিজেও হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। আর জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ইতই বাড়ছে। আর এই গতি বেশ দ্রুত।
তিনি বলেন, গাজীপুরের অনেক শ্রমিক নারায়ণগঞ্জে কাজ করতো। আর যখন সব কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে গেলো তখন তারা আবার গাজীপুরে ফিরে আসে এবং সাথে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও নিয়ে আসে।
"সেটা এখন বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে।"
তিনি বলেন, প্রথম দিকে যেসব করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে তারা হয় নারায়ণগঞ্জ ফেরত অথবা তাদের সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষজন।
"আর এভাবেই সংক্রমণ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে," তিনি বলেন।
এছাড়া গাজীপুরে বিভিন্ন ধরণের গার্মেন্টস রয়েছে। আর সেগুলোর বেশ কিছু এখনো খোলা আছে। আর বেতন-ভাতা নিয়ে যে ঝামেলাটা হলো তার কারণে এসব শ্রমিকরাও বেশ কিছুদিন মাঠ পর্যায়ে ছিল। যার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সোমবার সকালেএক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সামনে এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর অংশ হিসেবে জেলাটিতে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরণের সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো খোলা থাকার বিষয়টি।
প্রথম দিকে জেলাটি অনেক ভাল ছিল। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
কিন্তু পরেরবার যখন গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে গেলো আর শ্রমিকরা বেতনের আশায় ফিরতে শুরু করলো তখন থেকে অবস্থা পাল্টে যেতে শুরু করলো।
তিনি বলেন, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়ার দিকে ছোঁয়া এগ্রো ফার্ম নামে একটি কারখানায় প্রথম একজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়।
এর পর ওই কারখানার আরো শ্রমিকদের নমুনা পরীক্ষা করে আরো ২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এই কারখানাটির ব্যবসা মূলত নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামভিত্তিক। সেখান থেকে শুরু হওয়ার পর সংক্রমণ পরে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া সেই সাথে নারায়ণগঞ্জের সাথেও জেলার যোগাযোগ চালু ছিল।
তবে এখনো অন্য কারখানাগুলো তেমন সংক্রমিত হয়নি। আরেকটি কারখানায় একজনের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সে এখন সেই কারখানাতেই অবস্থান করছেন।
এই অবস্থার মধ্যে যদি আবারো কারখানাগুলো খুলে যায়, আবার যদি শ্রমিক আসা-যাওয়া করে তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সুযোগে অনেক ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে। তারা পিপিই বানানোর নাম করে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য ধরণের পণ্য সামগ্রী বানাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো যেভাবে খোলা রয়েছে তাতে লকডাউন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জরুরী।
এখনো অনেক কারখানা মালিক আছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তারা বেতন দিতে পারছেন না। এটি লকডাউন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গাজীপুরে অনেক বড় অন্তরায়।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান মনে করেন, জেলায় সংক্রমণ ঠেকাতে হলে মানুষ জনকে ঘরে থাকতে হবে। লকডাউন কার্যকর করার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া যেসব স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া পরামর্শ দেয়া হয়েছে সেগুলো অবশ্যই মেনে চলার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু নাসার উদ্দিন বলেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে লকডাউনকেই যথাযথভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এছাড়া নতুন করে কোন ব্যবস্থা এখনো তারা গ্রহণ করেননি।
বিভিন্ন ধরণের কল-কারখানা খোলার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসলে তারা সেটি কার্যকর করবেন বলেও জানান।
এরইমধ্যে, যেসব কারখানা খোলা রয়েছে সেগুলো যাতে কোন নিজেদের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং তাদেরকে যাতে কারখানার বাইরে বের হতে দেয়া না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়ার কথা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
তবে পুরো জেলায় লকডাউন করা হলেও এখনো সেটা ঠিকমতো কাজ করছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"মানুষের বাইরে বের হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।"
BBC