06/28/2025 করোনার প্রভাবে পোল্ট্রি খাতে বিশাল বিপর্যয়, লোকসানের কবলে সিরাজদিখানের খামারীরা
ahsanul islam
১ মে ২০২০ ০৫:৪৭
মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও প্রশাসনিক নির্দেশনার কারণে পোল্ট্রি খাতে বিশাল বিপর্যয় নেমে এসেছে। সারা দেশের ন্যায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার খামারীদের উপর এর প্রভাব পরেছে। ফলে চরম লোকসানের কবলে পরেছে এ উপজেলার পোল্ট্রি খামারীরা।
চলতি মাসে উপজেলার খামারগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী মুরগি উৎপাদিত হলেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনিক নির্দেশনার কারণে খামারিরা তাদের খামারে উৎপাদিত মুরগি বাজারজাত করতে পারছেন না। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় মুরগির দামও পূর্বের চেয়ে অর্ধেক নিচে নেমে গেছে। এতে করে ফার্মের মুরগি ফার্মেই পালতে হচ্ছে। মুরগি উৎপাদনে খাদ্যসহ আনুষঙ্গিক খচর বহনেও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ লোকাসান। অন্যদিকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নেয়া লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে সিংহভাগ খামারী। মাসিক কিস্তি পরিশোধের কারণে মুরগির দাম কম হলেও কিছু কিছু খামারী অল্প দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন মুরগি।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ অধিদপ্তর থেকে বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫শত যুবক লোন নিয়েছে। এদের শিংহভাগ যুবক ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে মুরগী, গরু ও মাছের খামার পরিচালনা করে বেকারত্ব দূর করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী লোন নেয়ার প্রথম তিন সপ্তাহ পর থেকে মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ শোধ করে আসছে তারা। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের কারণে পোল্ট্রি খাতে বিশাল বিপর্যয় নেমে আসার কারণে লোকসানের কবলে পরে কিস্তি দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে খামারীদের।
রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমর্দ্দন গ্রামের ব্রয়লার মুরগির খামারী রেজাউল করিম বলেন, আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষন করে সরকারী সহায়তায় কয়েক বছর যাবত মুরগির ফার্ম করেছি। মাসে মাসে কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে আমি এ ব্যাবসা করে লাভবান হয়েছি। গত মাসে আমার ফার্মে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করি।তাতে আমার সব কিছু মিলিয়ে খরচ হয় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু করোনার কারণে মুরগি কম দামে বিক্রি করতে হয়। তাতে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বর্তমানে ফার্মের উৎপাদিত মুরগি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত।
মালখানগর ইউনিয়নের আরমহল গ্রামের কক মুরগির খামারী মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি একজন কক মুরগির খামারী। গত মাসে আমার ফার্মে ৬ লক্ষ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার কক মুরগি উৎপাদন করি। কিন্তু ভাইরাসের কারণে ৪ হাজার মুরগি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়। এতে আমার সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা লোকসান হয়। আমার এ ব্যবসার মূলধন থেকে ক্যাশ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। আমি ছাড়াও সিরাজদিখানে অনেক খামারী লসের কবলে পরেছে।
সিরাজদিখান উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ডলি রানী নাগ জানান, সিরাজদিখানে প্রায় ৫ শত যুবক আমাদের এখান থেকে লোন নিয়ে মুরগী, গরু ও মাছের খামার করেছে। এখনও তাদের কিস্তি রানিং আছে কিন্তু কেউ গত মাসে কিস্তি পরিশোধ করেনি। আমরা করোনার কারণে কাউকে কিস্তি আদায়ে ফোর্সও করিনি। কিস্তি বন্ধে সরকার থেকে আমাদের কাছে কোন চিঠিপত্রও আসে নাই। সরকারের পক্ষ থেকে খামারীদের জন্য কোন বরাদ্দও দেওয়া হয় নাই। অফিস খুললে ৫ তারিখে বলা যাবে দিবে কি দিবে না। সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক গুরুত্বের উপর প্রনোদনা ঘোষনা করেছে তবে আমাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা ভাবে করেনি।