২০১৪ বিশ্বকাপের কথা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। ৯১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা এক শট লিওনেল মেসির। আর সে গোলেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ইরান। একটু পরেই ফোন পেলেন রেজা পারাস্তেশ। অপর প্রান্তে তাঁর বাবার হুমকিটা এখনো মজা করে বলেন সবাইকে, ‘ওই ম্যাচের পর, বাবা ফোন দিয়ে বলল, আজ রাতে বাসায় ফেরার দরকার নেই...ইরানের বিপক্ষে গোল করলে কেন? আমি বললাম, কিন্তু ওটা তো আমি না!’
কিন্তু রেজার অমন ‘দুর্বল’ প্রতিবাদ মানবেন কেন তাঁর বাবা? একটু আগেই টিভিতে পরিষ্কার দেখেছেন, কীভাবে তাঁর ছেলে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ইরানকে হারিয়ে দিল। ফোনে এখন অস্বীকার করলেই হলো! সেদিন রাতে আর বাড়ি ফেরা হয়নি রেজার।
সেদিন এখন পাল্টেছে। ফুটবল-পাগল বাবাও এখন মেসি আর রেজার মধ্যে পার্থক্যটা বোঝেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সেটা বলার সুযোগ নেই। রেজাকে দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ান রাস্তায়, অনেকে ভ্রু কুচকে ভাবতে শুরু করেন, কাল রাতেই না ন্যু ক্যাম্পে গোল করলেন মেসি, আজ কীভাবে হাজির হলেন ইরানে! হ্যাঁ, রেজা পারাস্তেশকে দেখে যদি মেসি মনে না হয়, তাহলেই বরং চোখ পরীক্ষা করে দেখাতে হবে। গৌর রং আর এক মুখ দাড়ির রেজার সঙ্গে যে শ্মশ্রুমণ্ডিত মেসির তফাত প্রায় নেই বললেই চলে! ইউরো স্পোর্টস ইউকের মতো সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত মেসির খবর দিতে গিয়ে রেজার ছবি ব্যবহার করে টুইট করেছে!
রেজাকে এখন আর তাঁর নামে কেউ চেনে না। এই ২৫ বছর বয়সীর নাম এখন ‘ইরানিয়ান মেসি’। তবে এমন তারকাখ্যাতি বিপদে ফেলে দিয়েছে তাঁকে। রেজার সঙ্গে সেলফি তুলতে এই সপ্তাহান্তে এত লোক হাজির হয়েছিল যে হ্যামেদান শহরে জ্যামই লেগে গিয়েছিল। শৃঙ্খলা ফেরাতে রেজাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাঁর গাড়িও আটক করা হয় কিছুক্ষণের জন্য। সামাজিক মাধ্যমে এমন ঝড় তোলার পেছনে কিন্তু রেজার বাবাই দায়ী। বাবার চাপাচাপিতেই বার্সেলোনার ১০ নম্বর জার্সি (মেসির জার্সি অবশ্যই!) পরে ছবি তুলে একটি খেলার ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেন রেজা। প্রতিক্রিয়া আসতে দেরি হয়নি, ‘আমি রাতে ছবি পাঠালাম আর সকালেই ওরা ফোন করল। দ্রুত যেন একটা সাক্ষাৎকার দিই।’
ব্যস, শুরু হয়ে গেল নতুন মেসিকে নিয়ে তোলপাড়। প্রথম দিকে একটু বিরক্ত হলেও এখন এটা আনন্দের সঙ্গেই মেনে নিচ্ছেন রেজা, ‘এখন সবাই আমাকে ইরানের মেসি হিসেবেই দেখে। সবাই চায়, আমি তাঁর সবকিছু অনুকরণ করি। আমি কোথাও গেলে সবাই খুব ধাক্কা খায়। আমি খুশি যে আমাকে দেখে ওরা এতটা আনন্দ পায়। ওদের এই খুশি আমাকেও অনেক উৎসাহ জোগায়।’ এমনই জনপ্রিয়তা রেজার, এখন বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার প্রস্তাবও আসছে তাঁর কাছে। কখনো পেশাদার ফুটবল না খেললেও ইদানীং একটু আধটু শিখছেন যেন মেসির অনুকরণটা আরও ভালো হয়।
‘ছোট’ আরেকটা স্বপ্নও আছে তাঁর। সেটা মেসির সঙ্গে দেখা করার। এমনকি ‘বডি ডাবল’ হয়ে তাঁর কাজের ভার কমানোর দায়িত্ব নিতেও রাজি রেজা, ‘ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় তিনি, তাঁর নিশ্চয় সব কাজ করার যথেষ্ট সময় নেই। তিনি যদি খুব ব্যস্ত থাকেন, তবে আমি তাঁর প্রতিনিধি হয়ে কাজ করতেই পারি।’ সূত্র: এএফপি।ভক্তদের আবদার মেটাচ্ছেন ‘মেসি’। ছবি: এএফপি