04/21/2025 ফরাসি প্রেসিডেন্টদের প্রেম
Admin 1
৯ মে ২০১৭ ২১:৩২
হাই স্কুলের এক ড্রামা শিক্ষিকাকে মনে ধরে গেল ১৫ বছরের এক কিশোরের। শিক্ষিকা বয়সে অনেক বড়। তাতে কী? প্রেম কি আর বয়স মানে? কিশোর ভাবে, যে করেই হোক, এই শিক্ষিকাকে বিয়ে সে করবেই। মেঘে মেঘে বেলা হলো, কিশোর হয়ে গেল অনেক বড়। তবু প্রেম জিইয়ে রইল সবুজ পাতার মতো। আর এই প্রেমের টানেই পরিণত বছর বয়সে সেই শিক্ষিকার সঙ্গে তাঁর বিয়েটা হয়েই গেল।
যাঁরা এবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খোঁজখবর নিয়মিত রাখছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, এই জুটি কারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ইমানুয়েল ম্যাখোঁ (৩৯) ও তাঁর স্ত্রী ব্রিজিতের (৬৪) প্রেমকাহিনি এটি। নির্বাচনের আগে অসম বয়সী দুজন মানুষের প্রেম ও বিয়ের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাখোঁ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে এটা প্রেমকাহিনি হিসেবে যতটা গ্রহণযোগ্য, নির্বাচনী প্রচারণায় তা একেবারেই বেমানান। মার্কিন মুলুকে এমন ঘটনা নির্বাচনে লড়া কোনো প্রার্থীর বেলায় অপরাধতুল্য।
ম্যাখোঁ ও ব্রিজিতের প্রেমকাহিনিতে কিছু অন্য রকম বিষয়ও আছে। প্রথমত, স্বামী তাঁর স্ত্রীর তুলনায় অনেক তরুণ। বেশি বয়সী পুরুষ ও কম বয়সী নারীর প্রেম-বিয়ের সচরাচর যে ঘটনা দেখা যায়, তা থেকে এটা একেবারেই উল্টো। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো—এ দুজন মানুষ বহু বছর ধরে একজন আরেকজনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় এই দম্পতির আবেগঘন মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীজুড়ে।
অনেক মানুষ ম্যাখোঁ ও ব্রিজিতের বয়সের এই পার্থক্যের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়ার দিকে আঙুল তুলতে পারেন। যদিও ট্রাম্প কখনো মেলানিয়ার নাটকের শিক্ষক ছিলেন না।
গত মাসে সিএনএন ফ্রান্সের মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মতামত নেয়। এতে দেখা যায়, ফ্রান্সের লোকজন কম বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী নারীর প্রেমের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বদনাম বা কেলেঙ্কারিকে মোটেও আমল দেয়নি।
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ ও বান্ধবী ভ্যালেরিয়ে থ্রিয়েরউয়েলার। ছবি: এএফপি
ফরাসি প্রেসিডেন্টদের এমন জটিল প্রেমের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের চার সন্তান সেজোলেন রয়াল নামে এক রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীর গর্ভে জন্ম নেওয়া। তবে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে বান্ধবী ভ্যালেরিয়ে থ্রিয়েরউয়েলার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের প্রেমিকা ফরাসি মডেল জুলি গায়েট। ছবি: এএফপি
পরে তিনি ফরাসি মডেল জুলি গায়েটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। প্যারিসে মোটরবাইকে করে ওই তরুণীর অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার সময় এক ট্যাবলয়েড পত্রিকার ক্যামেরায় ওঁলাদ ধরা পড়েন।
প্রেমের কোনো ঘটনায় একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাস্তায় মোটরবাইক দাবড়ে বেড়াচ্ছেন, ভাবা যায়! সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথাই ধরা যাক। মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে তাঁর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক বিরাট কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। এ কারণে তাঁকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হয়েছিল। অথচ ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের ক্ষেত্রে কিছুই ঘটেনি।
তাঁর পূর্বসূরি আরেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি নির্বাচিত হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। পরে তিনি ২০০৮ সালে মডেল ও পপ তারকা কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন। ব্রুনি তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে সিলিয়া আতিয়াস ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্ক টিকেছিল। প্রথম স্ত্রী ম্যারি ডমিনিক কুলিওলির সঙ্গে সারকোজির দাম্পত্য জীবন ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর প্রেম ছিল অ্যান নামের (লাল পোশাক) এই নারীর সঙ্গে। ছবি: এএফপি
আরেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর প্রেম ছিল অ্যান প্যাজোঁ নামের এক নারীর সঙ্গে। মিতেরাঁর কাছ থেকে তিনি এক হাজার ২১৮টি প্রেমপত্র পেয়েছিলেন। এই প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ‘লেটারস টু অ্যানি: ১৯৬২-১৯৯৫’ এবং ‘ডায়েরি ফর অ্যানি: ১৯৬৪-১৯৭০’ দুটি বইও প্রকাশ করে গালিমার্দ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৩ সালে অ্যানের সঙ্গে মিতেরাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন অ্যানের বয়স ছিল ২০ বছর। আর মিতেরাঁ ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী সিনেটর, ১২ বারের মন্ত্রী এবং বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। মিতেরাঁর স্ত্রীর নাম দানিয়েলি। মিতেরাঁ তাঁর এই প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখতেন। প্রেমিকা অ্যানের গর্ভে মাজারিন নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। মৃত্যুর ১৪ মাস আগে মিতেরাঁ মাজারিনের সঙ্গে তাঁর ছবি তুলতে পাপারাজ্জিদের সুযোগ দেন। ১৯৯৬ সালে মিতেরাঁর কবরে স্ত্রী দানিয়েল ও ছেলেদের পাশে অ্যানি ও মেয়ে মাজারিনকে একসঙ্গে দাঁড়াতে দেখেন দেশবাসী।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রোনাল্ড রিগ্যান ছাড়া অন্য সব প্রেসিডেন্ট এক স্ত্রী নিয়েই জীবন কাটিয়েছেন। বিল ক্লিনটনের সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা থাকলেও তাঁর বিয়ে টিকে আছে। জটিল প্রেমের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। তবে বর্তমানে রাজনীতিবিদদের মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিজীবনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসা নতুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও কেনেডিরও ব্যক্তিজীবনে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তবে আধুনিক গণমাধ্যমকে সেটা একান্তে সরিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
সিএনএন অবলম্বনে