04/24/2025 নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ: আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে'
Mahbubur Rohman Polash
১০ নভেম্বর ২০২০ ০৩:০০
শুষা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবন
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েফ বলেছেন, তার বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছে।
তিনি বলেন, "এই যুদ্ধে আপসের সুযোগও ক্রমশ কমে আসছে।"
প্রায় দেড় মাস আগে বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলটি নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধ ১৯৯৪ সালে থেমে গেলেও তাদের মধ্যে কখনও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত হলেও, আর্মেনিয়ার সরকারের সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয়রা এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।
এই সাক্ষাৎকারের পরেই তিনি ঘোষণা করেন যে তার দেশের বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুষা দখল করে নিয়েছে।
কিন্তু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আর্মেনিয়ার সরকার বলছে সেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এই শহরটি আর্মেনীয়দের কাছে শুষি নামে পরিচিত।
বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, নাগর্নো-কারাবাখের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করে নিলে সেটা হবে এই যুদ্ধে আজারবাইজানের জন্য বড় ধরনের বিজয়।
নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টের কাছে পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে শুষা শহর। এর ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক যুক্ত হয়েছে আর্মেনিয়ার সঙ্গে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শহরের দখল নিতে পারলে এখান থেকে রাজধানী স্টেপানাকার্টে হামলা চালানো আরও সহজ হবে।
শুষা শহরে বিধ্বস্ত একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ধ্বসংস্তুপের দিকে তাকিয়ে আছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি
এই শুষা শহর দখল করে নেওয়ার ঘটনাকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন এলাকাটি "স্বাধীন করা" হিসেবে।
তিনি বলেছেন, "বিশ্বে এমন কোন শক্তি নেই, যা আমাদের থামাতে পারবে।"
শুষা দখল করে নেওয়ার দাবি জানানোর আগে মি. আলিয়েফ বিবিসিকে বলেছেন, "আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে এসেছে।"
তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা পুনরায় এসব এলাকা ফিরে পাচ্ছেন, আর এ কারণে আপসের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের সুযোগ কমে আসছে।
প্রেসিডেন্ট আলিয়েফের এই ঘোষণার পরপরই আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর রাস্তায় লোকজন উল্লাস প্রকাশ করে।
দুটো দেশের মধ্যে ২৭শে সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে যুদ্ধ শুরু হলেও দেখা যাচ্ছে যে অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে আজারবাইজান ধীরে ধীরে নাগর্নো-কারাবাখের দিকে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে।
তবে শুষা শহর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার খবর অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আর্টস্রান হুভানিসায়ান ফেসবুকে লিখেছেন, "শুষি শহরের যুদ্ধ এখনও চলছে। অপেক্ষা করুন এবং আমাদের বাহিনীর ওপর বিশ্বাস রাখুন।"
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েফ
অন্যদিকে, নাগর্নো-কারাবাখের স্বঘোষিত সরকারের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বিবিসিকে বলেছেন, "আমরা শুধু বলতে পারি যে শুষি একটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে আজেরি ও কারাবাখের সৈন্যরা আছে, প্রত্যেকটি ভবন রক্ষা করার জন্য তারা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।"
আজারবাইজানের ঘোষণার আগে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুসান স্টেপানিয়ান লিখেছেন, "শুষা শহরের আশেপাশে রাতভর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে।"
তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধে আজারবাইজানের কিছু সৈন্য নিহত হয়েছে। ট্যাঙ্কসহ আরো কিছু যানবাহন ধ্বংস করা হয়েছে।
শুষা শহরের সঙ্গে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এই দুটো দেশেরই সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার আগ পর্যন্ত এই শহরে আজারবাইজানিদের সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু ওই যুদ্ধের সময় লাখ লাখ আজারবাইজানি শহরটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।
আর্মেনিয়ানদের জন্যও এটি ধর্মীয় কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হলি স্যাভিয়র গির্জা এই শহরে অবস্থিত, যা আর্মেনিয়ান অ্যাপস্টলিক চার্চের একটি প্রতীক। এর আগে আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আজারবাইজান ওই গির্জাটির ওপর হামলা চালিয়েছে।
দুটো দেশই সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করছে। আবার তারাই একে অপরের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালানোর অভিযোগ করছে।
বিবিসি