06/21/2025 ঈদবাজারে জাল টাকা, লেনদেনে বাড়তি সতর্কতা
Biplob
১১ মে ২০২১ ২৩:১৪
করোনার ছোবলে যখন জনজীবন ছন্দহীন, মানুষ যখন লড়ছে টিকে থাকার সংগ্রামে। তখন আবারও এলো মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদের আগমনী বার্তা।
ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষ যেমন নানা পরিকল্পনা আর কাজে ব্যস্ত হয়, তেমনি অপরাধীরাও জোর প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে। ঈদ-কেন্দ্রিক অপরাধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাল টাকা তৈরি ও ছড়িয়ে দেয়া। এবারও ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছে জাল টাকার কারবারিরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, জাল টাকা ছাপানোর জন্য উন্নতমানের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, হিট মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিন, ডাইস, জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা, বিভিন্ন ধরনের দামি কালি, আঠা ও স্কেল কাটার ব্যবহার করে চক্রগুলো। এ ছাড়া গ্রাফিকস কাজের জন্য ওই চক্রে রয়েছে দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
নিখুঁতভাবে টাকা ছাপতে তাদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এরা টাকার জলছাপ থেকে শুরু করে অন্যান্য নিরাপত্তার সবই হুবহু নকল করতে পারে।
চক্রগুলো সারা বছর ঘাপটি মেরে থাকে। ঈদ ও পূজা টার্গেট করে তারা জাল টাকার নোট ছাপে। টাকা ছাড়াও এরা ডলার ও রুপি জাল করছে। জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেয়া হয়। কিন্তু তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজ শুরু করে।
গেল ২ মে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের নোয়াগাঁও এলাকায় একটি বাসা থেকে গ্রেফতার হয় জাল টাকা ছাপানো একটি চক্রের হোতা জীবন হোসেন। ভাড়াবাসায় সে গড়ে তুলেছিল জাল টাকা তৈরির একটি মিনি কারখানা। ওই বাসা থেকেই দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে ৪৬ লাখ জাল টাকা ও টাকা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর জাল টাকাসহ কামরাঙ্গীরচর থেকেই গ্রেফতার হয়েছিল সে। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও চলমান। তখন কামরাঙ্গীরচর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের শুরু করে জাল টাকার কারবার। মাঝে ঢাকার সাভারে কারবার চালালেও তিন মাস ধরে সে কামরাঙ্গীরচরের নোয়াগাঁও এলাকায় এই কারবার চালাচ্ছিল।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বিশ্বের অনেক দেশের মুদ্রার সিকিউরিটি ভালো। সেগুলো জাল করা যায় না। আমাদেরও জাল করা সম্ভব নয়, এমন টাকা তৈরির সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। এ ছাড়া জাল টাকা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ানোর ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।
জাল টাকা উদ্ধার অভিযানে থাকা ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘জাল টাকার কারবারিরা এত নিখুঁতভাবে টাকা ছাপানো শুরু করেছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব। শুধু টাকা ছাপানোর কাগজ ছাড়া আর সবই আসল টাকার মতো থাকে। এসব জাল টাকা আসল টাকার বান্ডিলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় তারা। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন।’
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা জাল টাকার কারবারিদের মূলোৎপাটনে কাজ করে যাচ্ছি। তবে অনেকে বছরের পর বছর এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। তাদের ওপর আমরা নজর রাখছি।’
জীবনের মতোই আরেকটি চক্রের হোতা মো. জাকির। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে।
সে প্রথম জাল টাকাসহ ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেই মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের জাল টাকার কারবার শুরু করে। পরে একই বছরের ১৩ অক্টোবর আবারও জাল টাকা তৈরির সময় রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রূপনগর থানা এলাকায়, ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা এবং ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর শ্যামপুর থেকে পুলিশের হাতে জাল টাকা তৈরির সময় গ্রেফতার হয় সে। তখন তার কাছ থেকে ২০ লাখ ভারতীয় জাল রুপিও জব্দ করা হয়।
এই জাকির প্রতিবারই জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের জাল টাকার কারবার শুরু করে। বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছে। ঈদ সামনে রেখে ফের জাল টাকা ছাপানোর কাজ করছে বলে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, তাদের মতো আরও বেশ কিছু চক্রের হোতা গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের জাল টাকা ছাপাচ্ছে। এসব টাকা ধাপে ধাপে ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। তারা এক লাখ জাল টাকার বান্ডিল বিক্রি করে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘যারা জাল টাকার কারবারি, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একই কাজ শুরু করে। তাদের ভালো পথে আনা যাচ্ছে না। এরা সাধারণত ঢাকার উপকণ্ঠে বেশি সক্রিয় থাকে। খুবই নিখুঁতভাবে তারা জাল টাকার নোট তৈরি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় ৪০০ টাকার কালি ও ২০০ টাকার কাগজ দিয়ে জাল টাকা বানিয়ে তা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করত তারা। ফলে অন্য পেশায় থাকলেও বেশি লাভের আশায় অনেকে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেনদেনের সময় টাকার নিরাপত্তা চিহ্নগুলো সতর্কতার সাথে খতিয়ে দেখা জরুরি। পাশাপাশি উন্নত দেশের মতো, টাকা জাল করা যায় না এমন সিস্টেম ডেভেলপ করাও এখন সময়ের দাবি।