04/21/2025 ফ্রিল্যান্সার তৈরির মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাসে ব্যাপক অবদান রাখছে এলইডিপি
amaderodhikarpatra@gmail.com
১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৭
রাজশাহী, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলইডিপি) যুবক-যুবতীদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আত্ম-উপার্জনশীল হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব হ্রাসে ব্যাপক অবদান রাখছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অত্যন্ত চমৎকার এই প্রকল্পের উদ্ভাবক এবং তারই নির্দেশনায় এটি পরিচালিত হচ্ছে।
এলইডিপি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে প্রতিবন্ধীসহ ৭৭ হাজার যুবক-যুবতী গ্রাফিক্স ডিজাইন, জিডিটাল মার্কেটিং ও ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর তিনটি ‘প্রফেশনাল আউস সোর্সিং ট্রেইনিং’ সম্পন্ন করেছে। এদের মধ্যে ৩২ হাজার ২৩৪ জন যুবক-যুবতী ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আয় করছেন এবং তাদের মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেহেতু দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী- তাই এলইডিপি দেশের ২ লাখ ৪০ হাজার যুবতীকে দুই দিনব্যাপী একটি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
প্রকল্পটির সাথে পরিচিত কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আইসিটি বিভাগের আওতায় এলইডিপি প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। চাকরীর পিছে না ছুটে, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের আত্ম-উপার্জনশীল করে গড়ে তোলাই প্রকল্পটির লক্ষ্য। লক্ষ্যটি অর্জনের জন্য, সরকার প্রতিবন্ধীসহ মেধাবী যুবক-যুবতীদের মাঝে প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ১৩ হাজার ল্যাপটপ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ হাজার ল্যাপটপ বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে কমনওয়েলথ অব লার্নিং, ক্যানাডা এবং দ্য কোর্সেরার উদ্যোগে কোল-কোর্সেরা ওয়ার্কফোর্স রিকভারি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৩ হাজার যুবক-যুবতীকে ‘ডিজিটাল স্কিলস’ এবং ‘এন্টারপ্রেনার’ এর ওপর ফুলব্রাইট স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পটি মোট ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্য থেকে ১ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিলেও আরো ১ লাখ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করেছে আর এভাবে অন-লাইন মার্কেট থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স আয় হয়েছে।
লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর কল্যাণে রুবেল আলী আজ একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। এখন আর রুবেল আলী দরিদ্র নন। বরং তিনি এখন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একজন রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রতি মাসে ফ্রি ল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করছেন।
দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় নগরীর এই যুবক বলেন, ‘আমার দরিদ্র পিতা আমাদের জন্য খাবারও যোগাড় করতে পারতেন না। তাই আমার জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আমার এক ভাই ও দুই বোন আছে। দারিদ্রতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়েই তাদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। কখনো কখনো আমাদের আখ খেয়েও ক্ষুধা মেটাতে হতো। আমাকে স্কুলে যাবার আগে ও স্কুল থেকে ফেরার পর অন্যের জমিতে কাজ করতে হতো।’
রুবেল নিয়মিতভাবে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারলেও দারিদ্রতাকে জয় করে সামনে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাকে সফল হতে সহায়তা করেছে। তিনি ২০১২ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলগুলো বুস্ট করে অর্থ উপার্জনের উপায় বের করে। তখন আমাদের দেশে বিষয়টি ‘সহজপ্রাপ্য’ ছিল না।
রুবেল বলেন, ‘একটি মোবাইল ফোন সেট থেকে আমি ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে বুস্টিং শুরু করি। শুধু সামান্য আয় হলেও, আমি আশা ছাড়িনি।’ পরে, তিনি টাকা ধার করে একটি কম্পিউটার কেনেন এবং মাসে ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা শুরু করেন। এর পাশাপাশি তিনি তার লেখাপড়াও চালিয়ে যান এবং ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন।
এখন রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুবেল বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে এলইডিপি’র ব্যাপারে জানতে পারি। তখন আমি এই প্রকল্পের আওতায় গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ও ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্স তিনটি সম্পন্ন করি।’ কোর্সগুলো সম্পন্ন করার পর, তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে রেমিটেন্স আয়ের একটি উপায় খুঁজে পান এবং ‘এসএমএমজিওয়াইইউজেড.কম’ নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেন। এখন তিনি প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করেন।
মাস্টার্স এর ছাত্র মোসাম্মৎ আলজাও ওয়েব ডিজাইনিংয়ের ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন এবং এখন তিনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন। নিজেকে আত্ম-নির্ভরশীল নারী অভিহিত করে আলজা বলেন, তিনি ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তার সকল ব্যয় মেটান।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইল আহমেদ পলক বলেন, এলইডিপি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে প্রায় ৬.৫ লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সার আয় করছেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের ইচ্ছা ও সাফল্যের কাহিনী আমাদেরকে ৫০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ‘উইমেন আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশনের কাছে পাঠানো হবে।’ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রবর্তন করে ডিজিটাল রেমিটেন্স যোদ্ধাদের একটি আত্ম-পরিচয় দিয়েছেন।
বাসস