04/21/2025 বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা রহিত
Admin 1
১৫ জুন ২০১৭ ২৩:১৮
১৫ জুনের সকাল শুরু হয়েছিল অনেক স্বপ্ন নিয়ে। কর্মব্যস্ত এক দিনের শুরুতেও অফিস-আদালতে সবাই কাজ ভুলেছিলেন। সবার অপেক্ষা কখন শুরু হবে ম্যাচ? আইসিসির কোনো বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ। এমন দিন যে এর আগে কখনো আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে! প্রতিপক্ষ ভারত হওয়ায় ছড়াচ্ছিল বাড়তি উত্তেজনাও। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যে স্বপ্নযাত্রা চলছিল বাংলাদেশের, ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠলে সেটা পূর্ণতা পেত আজ।
কিন্তু হলো না, কিছুই হলো না। বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রাটা পৌঁছাল না ১৮ জুন পর্যন্ত। থেমে গেল এখানেই। ভারতের পূর্ণাঙ্গ পেশাদারি নৈপুণ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন মাশরাফিরা। ২০১৫ কোয়ার্টার ফাইনালের ইনিংসটা যেন আবারও খেললেন রোহিত শর্মা। তাঁর এক ইনিংসে বাংলাদেশের শেষ আশারও সমাধি। অন্য প্রান্তে বিরাট কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। অধিনায়কের সেঞ্চুরি না পাওয়াটাই বোধ হয় ভারতের একমাত্র অতৃপ্তি!
২৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে জিতেছে ভারত। সেটাও ৫৯ বল হাতে রেখে। ১৮ জুনের ফাইনালের আগে উড়তে থাকা পাকিস্তানকে একটা বার্তাও যেন দিয়ে রাখল তারা।
কিন্তু কেন এমন পরিণতি? ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দক্ষতার সামনে বড্ড অসহায় দেখাল মোস্তাফিজ, তাসকিন, মাশরাফিদের। তবে বোলাররা বলতে পারেন, এমন উইকেটে লড়াইয়ের পুঁজি আরও বেশি দরকার ছিল।
কোনো টুর্নামেন্ট জিততে চাইলে বোলিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আবারও প্রমাণ করেছে ভারত। বর্তমানে ওয়ানডেতে ৪০ ওভারের পর ৫ জন ফিল্ডার বাইরে থাকে। এ কারণে ইনিংসের মাঝপথে (১১ থেকে ৪০ ওভারে) রান নেওয়াটাই বেশি জরুরি। আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইনিংসের এ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে ভারত (১৯টি), আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮টি উইকেট পাকিস্তানের। ফাইনালেও উঠেছে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া দুই দল।
তাই ফেবারিট ও আন্ডারডগের ট্যাগ লাগানো এ দুই দলের ফাইনালে চলে যাওয়াটাই দেখিয়ে দিয়েছে, ব্যাটিং নয় বোলিংই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতায়। এখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে গেছে অনেক। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশি বোলাররা পেয়েছেন মাত্র ১১ উইকেট!
অথচ ব্যাটিং আশা জাগিয়েছিল। তামিম ইকবাল (৭০) ও মুশফিকুর রহিম (৬১) প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে তিন শ ছাড়ানোর আশা দেখিয়েছেন। আকস্মিক এক ধসে বাংলাদেশ মাত্র ২৬৪ রান করার পরও জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। কারণ, ভারতকে জিততে হলে যে এজবাস্টনে রান তাড়া করার রেকর্ড গড়েই জিততে হতো।
এজবাস্টনে এর চেয়ে বেশি রান করে জেতার দুটি ঘটনা আছে বটে। ১৯৯৩ সালে ২৮০ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৯৭৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ২৬৭ রান। কিন্তু কোনোটিই ৫০ ওভারের ম্যাচ ছিল না, বাংলাদেশের সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না।
তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নিয়মিত দৃশ্য দেখা গেল আবারও। রান তাড়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজতম কাজ মনে করিয়ে ছাড়লেন রোহিত ও কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে গড়লেন ১৭৮ রানের জুটি।
১৫তম ওভারে শিখর ধাওয়ানকে মাশরাফি আউট করাটাই একমাত্র সান্ত্বনা হয়ে থাকল। তবে আউট হওয়ার আগেই ব্যক্তিগত কাজ সেরে নিয়েছেন ধাওয়ান। তামিমকে টপকে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের চূড়ায় আবারও উঠে গেছেন ভারতীয় ওপেনার। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই রোহিতও টপকে গেছেন তামিমকে।
এ হার থেকেও অর্জন আছে বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার এ অর্জন তো কেড়ে নিতে পারবে না! ৫০ ওভারের দুটি টুর্নামেন্টে টানা দুবার গ্রুপ পর্যায় পেরিয়ে আসাও লেখা থাকবে অর্জনের খাতায়। এখন শুধু ভবিষ্যতের অপেক্ষা, যখন নক আউটের অনভিজ্ঞতা কাটিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্নযাত্রার সফল সমাপ্তি টেনে দিতে পারবে!