04/20/2025 ভয়াবহ শোষণ চলে আসছে চা শ্রমিকদের বেলায় ঃ আ ব ম ফারুক
odhikarpatra
২৩ আগস্ট ২০২২ ১২:২৭
আমার এতকাল ধারণা ছিল যে বাংলাদেশে সবচেয়ে তীব্র শ্রম-শোষণ হয় গার্মেন্টসের মেয়েদের ক্ষেত্রে। তারা এত কম মজুরি পায় যে তাদেরকে বাধ্য হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। তারপর আছে মাস্তানদের নির্যাতন ও যখনতখন ধর্ষিতা হওয়ার ভয়। পত্রিকার পাতায় অহরহ এরকম কষ্ট পাওয়া সংবাদগুলো পড়তে পড়তে আমরা ক্লান্ত। কিন্তু জানা ছিল না যে এই দেশে তার চেয়ে ভয়াবহ শোষণ চলে আসছে চা শ্রমিকদের বেলায়। গার্মেন্টসের চাইতেও ন্যক্কারজনক এই শ্রম শোষণের কথা আমরা কখনোই জানতে পারিনি। পত্রিকাগুলোও কখনো এই মর্মান্তিক সংবাদগুলো আমাদেরকে জানায়নি। কোন নায়ক বা নায়িকা হাঁচি দিয়েছে সেই খবরও আমরা পত্রিকার পাতায় পেয়েছি। কিন্তু চা-শ্রমিকদের অতিশয় অমানবিকভাবে শোষণ করার খবরগুলো আমরা কখনোই পড়তে পারিনি।
এখন নিজেকেও খুব অপরাধী মনে হয়।এতবার চা বাগানগুলোতে বেড়াতে গেছি, প্রকৃতির মনমাতানো সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়েছি, বিভিন্ন রকম ছবি তুলে ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়েছি বা এলবাম সাজিয়েছি। তার চেয়েও ছবি তুলেছি মন-ক্যামেরা দিয়ে, আর ভরে তুলেছি নিজস্ব ভুবন। কিন্তু কখনোই জানতে পারিনি এবং জানতে চাইনি চা-শ্রমিকরা কেমন আছে। তাদের মজুরির পরিমাণ শুনে এখন অত্যন্ত পরিতাপ হচ্ছে যে কেন তাদের পক্ষে একটিবার কথা বলিনি বা কেন তাদের কথা কখনো জানতে চাইনি। আমার এই ‘বিলাসী নির্লিপ্ততার’ জন্য আমি এই চা-শ্রমিক ভাইবোনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমার ও আমাদের যুগযুগের বা শতাব্দীর নির্লিপ্ততা মোটেও উচিত হয়নি।
দেশের অন্যান্য এলাকার শ্রমিক বা ভূমিহীন কৃষকরা বর্তমানে যে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন, এই হতভাগ্য চা-শ্রমিকদেরও তা দেয়া হোক। সেজন্য অর্থের সংস্থান অসম্ভব হলে (!) ভোক্তা পর্যায়ে চা-পাতার দাম কেজি প্রতি ১ টাকা বাড়িয়ে যদি তাদের মজুরি দৈনিক ৫০০ টাকা করা হয় তাতে আমাদের কোনো ভোক্তার আপত্তি থাকবেনা বলেই আমার বিশ্বাস। এছাড়া তাদের মানবিক জীবন-যাপনের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হোক, সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে তার প্রত্যাশা করছি।
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।