04/20/2025 ট্রাম্প ও কিম, চীনের মাথা ঝিম
MASUM
১১ আগস্ট ২০১৭ ১৬:২৩
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেইজিংকে শামিল করার চেষ্টা চালিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষতক তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়েছে বলা যায়। কেননা গত শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ আরোপের প্রস্তাবে সায় দেয় চীন। চীনের সমর্থন পেয়ে ৭২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের ওপর তাঁর চলমান হুমকি আবার শুনিয়ে দেন।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকি-ধমকিতে গণমাধ্যমের শিরোনাম রচয়িতারা যতটা আমোদ বোধ করেন, সম্ভবত ততটাই ক্ষুব্ধ চীনের কমিউনিস্ট শাসকেরা। সিউলের ইয়োসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন ডেলারি বলেন, ট্রাম্পের জ্বালাময়ী বক্তব্যে পিয়ংইয়ং আমোদ বোধ করবে। তবে চীন এতে সন্তুষ্ট হবে না। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর এখন বাগ্যুদ্ধে নেমেছেন এবং উত্তেজনা তীব্রতর করেছেন...যা বেইজিং ভালোভাবে নেবে না।’
ট্রাম্পের জ্বালাময়ী বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির মাধ্যমে বেইজিং জানায়, তারা ‘পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে তোলে, এমন সব কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা বলা থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকার’ আহ্বান জানাচ্ছে। এখন এই সমস্যার সমাধানে ‘আরও বড় ধরনের প্রচেষ্টা’ প্রয়োজন।
তবে চীনের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক পরামর্শক শি ইনহং বলেছেন, ট্রাম্পের ব্যবহার করা ‘চরম হুমকিমূলক শব্দ’ যা আংশিকভাবে চীনকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প বলেছেন বলে তিনি ধারণা করছেন। বিষয়টি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য হতাশাজনক।
বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শি বলেন, ‘ট্রাম্পের ভাষা খুবই উসকানিমূলক। তাঁর বক্তব্যের ৩০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ আর ৭০ শতাংশ বাগাড়ম্বর। তবে কিম জং-উন একজন বাতিকগ্রস্ত মানুষ। কাজেই এ ধরনের ভাষা ও হুমকির কারণে দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটে যেতে পারে।’
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন নানাভাবে। গত এপ্রিলে টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া বাজে আচরণ করছে।...এ বিষয়ে সাহায্য করতে চীন সামান্য কাজ করেছে!’
গত মাসে উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেন, ‘হয়তো এ বিষয়ে চীন উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেবে এবং একবারে সারা জীবনের মতো এ সমস্যার সমাধান হবে।’
ট্রাম্প স্বীকার করেন, চীনের সাহায্যে পেতে তিনি বাণিজ্য নিয়ে দেশটিকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিরত থেকেছেন।
বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই সংকট উত্তরণে সহায়তার চেষ্টা করছেন, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক অবরোধ প্রস্তাবে চীন সমর্থন দিয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এবং কূটনৈতিক নীরবতা বর্তমান এই সংকট নিরসনে সহায়তা করতে পারে বলে বেইজিং আশা করে। কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্নপথে নিয়ে যাচ্ছে।’
শি আরও বলেন, ‘চীন কেবল উত্তর কোরিয়াকে চাপ দিচ্ছে। তবে আমাদের উচিত সামঞ্জস্য রক্ষা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও কিছু চাপ দেওয়া। কারণ, বিষয়টা উভয় পক্ষের জন্যই বিপদের। চীনের উচিত একটি বিবৃতি দেওয়া যেমনটি কয়েক বছর আগে দেওয়া হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা উচিত: ‘চীনের দোরগোড়ায় কাউকে হম্বিতম্বি করার অনুমোদন দেওয়া হবে না।’
ডেলারি বলেন, ট্রাম্পের জ্বালাময়ী বক্তব্য সি চিন পিংয়ের প্রচেষ্টাকে জটিল করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি চীনকে পাশে রাখতে চান, তবে এ ধরনের বক্তব্য ভালো পদক্ষেপ নয়। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো একমাত্র ট্রাম্পই পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে ফেলেছেন।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চেং শিয়াওহে বলেন, চীনের এখন উচিত কূটনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত, উত্তর কোরিয়ার ওপর নম্র পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হয়েছে।’
বর্তমান সংকট সি চিন পিংয়ের জন্য তীব্র মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক স্পর্শকাতর দুটি বড় ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি বছরেই ট্রাম্প চীন সফর করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ বছরের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শি বলেন, চীনের নেতার উচিত ট্রাম্পকে চাপ দেওয়া। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো সামরিক সংঘাত হয়, তবে এর বিশাল নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’