04/19/2025 দেশের স্ট্রাইকাররা গোল করছেন, আপনিও দেখুন!
MASUM
১১ আগস্ট ২০১৭ ১৮:০৭
সুযোগ পেয়েই গোল করেছেন মতিন মিয়া।
বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা ফাঁকা পোস্টেও গোল করতে পারেন না’—চায়ের আড্ডায় হোক কিংবা ফেসবুকে, দেশের ফুটবল নিয়ে আলোচনা হলেই কথাটি শোনা যাবেই। যাবে না-ই বা কেন! বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আট ম্যাচে ৩২ গোল হজমের বিপরীতে মাত্র দুটি গোল করতে পেরেছে বাংলাদেশ। গোলের মুখ থেকেও বল জালে জড়াতে না পারায় হারতে হয়েছে ভুটানের বিপক্ষেও। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার শীর্ষে তালিকায় থাকে কয়েকজন বিদেশির নাম। ফলে হতাশা থেকে ফুটবলপ্রেমীদের মনে এ কথা আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হতাশা কাটিয়ে এবারের প্রিমিয়ার লিগ অবশ্য এখন পর্যন্ত আশার গানই শোনাচ্ছে। লিগের তৃতীয় পর্ব অর্থাৎ ১৮টি ম্যাচ শেষ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচের ভাগ্যই গড়ে দিয়েছেন দেশি ফুটবলাররা; যা ফুটবলকে দেখাচ্ছে নতুন ভোরের স্বপ্ন।
কথা উঠতে পারে, মাত্র ১৮ ম্যাচেই এই কথা! ১৮ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের ফুটবলে কোনো রেনেসাঁ সৃষ্টি হয়নি। সম্ভবও নয়। তবে ম্যাচগুলোতে দেশি ফুটবলারদের দৃষ্টিনন্দন গোল দেখে মনে হচ্ছে, গোল না করাটাই তাঁদের জন্য এখন কঠিন।
এবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রথম ১৮ ম্যাচে গোল হয়েছে ৩৭টি। ম্যাচপ্রতি গোল দুটির বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে কম কি! আশার কথা হলো, বাংলাদেশের ফুটবলাররা করেছেন ১৮টি গোল। ১৬টি এসেছে বিদেশিদের পা থেকে। বাকি তিনটি আত্মঘাতী। সর্বোচ্চ তিন গোল চট্টগ্রাম আবাহনীর তৌহিদ আলম সবুজ ও রহমতগঞ্জের গিনির স্ট্রাইকার ইসমাইল বাঙ্গুরার।
কিছু গোল তো বারবার ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখার মতো (এটা ঠিক, বাংলাদেশের ফুটবলের দৃশ্য ইউটিউবে পাওয়া কঠিন)। শেখ জামালের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারা ম্যাচে শেখ রাসেলের খালেকুজ্জামান সবুজ বক্সের বাইরে থেকে ভলিতে দলের একমাত্র গোলটি করেছিলেন। তা দেখে প্রতিপক্ষ কোচ জোসেফ আপুসি যদি হাততালি দিয়েও থাকেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই। সবুজ মূলত লেফট ফুলব্যাক, কিন্তু দলের প্রয়োজনে সেদিন কোচ তাঁকে খেলিয়েছিলেন লেফট উইংয়ে। সুযোগ পেয়েই এমন দর্শনীয় গোল।
চট্টগ্রাম আবাহনীর স্ট্রাইকার তৌহিদ আলম সবুজ টানা তিন ম্যাচে গোল করেছেন। তাঁর দলও পেয়েছে হ্যাটট্রিক জয়। বিজেএমসির বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ী ম্যাচে সবুজের গোলটি দেখে সবার মুখ থেকেই বের হয়েছে ‘ওয়াও’। ডান প্রান্ত থেকে মনসুরের গড়ানো বলে বাম প্রান্তের শূন্য ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে দূরের পোস্টে বাঁ পায়ে প্লেসিংয়ে গোলটি করেছেন। এমন গোল দেখে কারও বলার সাধ্য থাকে না, বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা গোল করতে জানেন না।
খেলোয়াড় |
ক্লাব |
গোল |
তৌহিদুল আলম সবুজ |
চট্টগ্রাম আবাহনী |
৩ |
ইসমাইল বাঙ্গুরা |
রহমতগঞ্জ |
৩ |
রাশেদুল ইসলাম শুভ |
রহমতগঞ্জ |
২ |
আমজাদ আলি |
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র |
২ |
তপু বর্মণ |
সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব |
২ |
মোমোদু বাহ |
শেখ জামাল ধানমন্ডি |
২ |
এমেকা ডার্লিংটন |
আবাহনী লিমিটেড ঢাকা |
২ |
দাওদা সিসে |
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র |
২ |
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের ভাগ গড়ে দিয়েছেন তরুণ রুবেল মিয়া। গ্যালারিতে বসা প্রায় হাজার পাঁচেক দর্শক ধরেই নিয়েছিলেন, সমতায় শেষ হবে দ্বৈরথ। ঠিক তখনই সতীর্থ নাবিব নেওয়াজ জীবনের হেড থেকে পাওয়া বলটি আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে প্লেসিংয়ে গোল।চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে উৎসবের আগের ম্যাচেই অখ্যাত তৌহিদুর রহমান লিটনের কাছে হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিল এমেকা ডার্লিটন, ল্যান্ডিং ডার্বোরা। লিটনের একমাত্র গোলেই আবাহনীকে হারায় ‘বিনে পয়সার’ ফরাশগঞ্জ।রাশেদুর রহমান শুভ নামটি না শোনারই কথা। অথচ রহমতগঞ্জের এই অখ্যাত স্ট্রাইকারই আরামবাগের বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল। দ্বিতীয় গোলটিতে ইনসাইড আউটসাইড ডজে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে ঘোল খাইয়েছেন। আর শুইয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষককে।
মর্যাদার লড়াইয়ে আবাহনীর ত্রাতা হয়ে এসেছেন রুবেল।
শুভ অখ্যাত হলে আমজাদ আলি তো অচেনা এক তরুণ। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব কোয়ালিটি স্পোর্টসে খেলে সরাসরি নাম লিখিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ ফুটবলে। অথচ শেষ দুই ম্যাচে গোল করে জিতিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রকে।আর মো. ইলিয়াস নামে টাঙ্গাইলের এক কিশোর, যার শরীর থেকে যায়নি এখনো কৈশোরের ঘ্রাণ। অথচ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হলো স্বপ্নের মতো। তাঁর একমাত্র গোলেই ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১-০ গোলে হারিয়েছ রহমতগঞ্জ। গোলটিতেও নিখুঁত ফিনিশিংয়ের ছাপ। আক্রমণভাগের তৃতীয়ার্ধ থেকে শারহান হালদারের থ্রু গোল এরিয়ার ডান প্রান্তে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় দূরের পোস্টে প্লেসিং। বুঝিয়ে দিলেন, প্রতি ম্যাচেই তাঁকে মাঠে নামাতে হবে।এ ছাড়া তরুণ মতিন মিয়া, নুরুল আবসাররাও খুলে ফেলেছেন গোলের খাতা। ফরোয়ার্ডদের ভালো সময়ে গোল করার ক্ষেত্রে ডিফেন্ডাররাই বা কম যাবেন কেন! ইতিমধ্যে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ করেছেন দুই গোল, এক গোল আছে নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর।বিদেশি কোটা কমে যাওয়ায় প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চটা এবার দেশি স্ট্রাইকারদের জন্য উন্মুক্ত। সে সুযোগে আলোটাও নিজেদের দিকে কেড়ে নিচ্ছেন সবুজ, শুভরা। নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, জাতীয় ফুটবল দলের জন্য সুসংবাদ। এই মুহূর্তে দেশের স্ট্রাইকাররা যখন দর্শনীয় গোল করছেন, আপনি তখন ঘরে বসে কেন?
দর্শকের তালিই যদি শোনা না যায়, গ্যালারির গর্জন যদি কাঁপন না ধরায়, যদি দর্শনীয় এক গোল করে দর্শকের আনন্দ চিৎকারই শোনার সৌভাগ্য না হয়, তবে আর গোল করা কেন!