04/22/2025 মিটল শিল্পীদের সঙ্গে প্রদর্শকদের দ্বন্দ্ব
MASUM
১৪ আগস্ট ২০১৭ ০৯:০২
কাজী ফিরোজ রশীদের বাসায় একসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিবার ও প্রদর্শক সমিতির নেতারা
হাতে ফুল, মুখে হাসি। এই কাতারে শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক ও প্রদর্শক—আশাজাগানিয়া এমন দৃশ্য অবশেষে দেখা গেল। অভিযোগ, হুমকি, নিষেধাজ্ঞায় তিক্ত ৫২টি দিন শেষে মিললেন শিল্পী ও প্রদর্শকেরা। ঠিক হলো, আর মান–অভিমান নয়, এখন থেকে সবাই একসঙ্গে চলবেন।
গত শনিবার মধ্যরাতে ঘরোয়া বৈঠকে ফুল দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যদের দ্বন্দ্বের অবসান হলো। প্রদর্শক সমিতির নেতারা এখন ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ সোমবার সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত করবেন।
তবে প্রদর্শক ও শিল্পী পরিবারের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ হলেও শাকিব খানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় অনিয়মের অভিযোগ এনে তা বন্ধের দাবিতে গত ২১ জুন সেন্সর বোর্ড ঘেরাও করে চলচ্চিত্র পরিবার। সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হামলার বিচার না হলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সারা দেশে সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। গত মঙ্গলবার বার্ষিক সাধারণ সভায় সমিতির নেতারা আরও সিদ্ধান্ত নেন, চলচ্চিত্র পরিবারের বেশ কয়েকজন শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকের ছবি প্রদর্শন করবেন না।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ এবং চিত্রনায়ক ফারুকের যৌথ উদ্যোগে আকস্মিক ঘরোয়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যোগাযোগ করা হলে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, তিনি এই বৈঠকের খবর আগে থেকে জানতেন না। ফিরোজ রশীদের বাসায় নিমন্ত্রণের কথা শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন, চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যরা সেখানে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর হামলার ঘটনায় তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্যই নিজেদের মধ্যে বিরোধ রাখতে চাই না।’ শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরও আগে থেকে ওই বৈঠকের কথা জানতেন না। অভিনেতা ফারুকের ফোন পেয়েই ফিরোজ রশীদের বাসায় হাজির হয়েছিলেন। মিশা বলেন, ‘চলচ্চিত্র অঙ্গন একটা সুন্দরের বাজার। এখানে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। ভালো লাগছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। মুরব্বিরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, মধ্যস্থতা করেছেন।’ এখানে মুরব্বির ভূমিকা পালন করেছেন জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফারুক। তিনি বলেন, ‘মিলমিশ হবে না কেন, আমরা তো ভালোবাসার পৃথিবীর মানুষ। এখানে কে শিল্পী, কে প্রদর্শক, সেটা বিষয় নয়। সবাই মিলেই চলচ্চিত্র পরিবার। সবাই তো উদার মনের মানুষ। ভুল-বোঝাবুঝি হবে, আবার ঠিক হয়ে যাবে সব।’ শাকিব খানের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, ‘আমরা এখনো তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ ব্যাপারে ওর পক্ষের লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে, আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। আমি এ বিষয়টিও মিটমাটের চেষ্টা করব।’
সেদিন ফিরোজ রশীদের বাসায় উপস্থিত চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের দুই পক্ষের ভুল-বোঝাবুঝিতে তৃতীয় একটি পক্ষ সুযোগ নিচ্ছিল, যা দেশের চলচিত্রের জন্য ভয়ংকর হুমকি। আমাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। দিন শেষে আমরা একই চলচ্চিত্র পরিবারের মানুষ।’ শনিবার রাতের ঘরোয়া বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ, সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঞা আলাউদ্দীন প্রমুখ।
প্রদর্শক সমিতির তিনবারের সভাপতি বর্তমানে ঢাকা-৬ আসনের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছিল। শিল্পী-প্রদর্শকের দূরত্ব বাড়ছিল। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এই শিল্প পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পড়ে যেত। এ কারণে আমি বন্ধু ফারুকের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিই। এখন সবকিছু ঠিকঠাক চললেই হয়।’