04/22/2025 চলছে প্যারামেডিক দিয়ে
MASUM
১৪ আগস্ট ২০১৭ ০৯:১০
নগরবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৮টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নাগরিকেরা কী ধরনের সেবা পান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ, চিকিৎসার মান, নাগরিকদের অভিমত নিয়ে প্রথম আলোর ধারাবাহিক আয়োজন নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হালচাল
খিলগাঁওয়ের জোড়পুকুর মাঠসংলগ্ন নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র l
চিকিৎসক নেই। চলছে লোডশেডিং। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন একজন কমিউনিটি প্যারামেডিক।
গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় খিলগাঁওয়ের জোড়পুকুর মাঠ এলাকায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রজেক্টের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খিলগাঁও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এক নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওয়ার্ডে কম-বেশি চার লাখ মানুষের বাস। তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ দুই লাখ। মূলত তাদের চিকিৎসার জন্য নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
খিলগাঁও ক্লাব মোড়ের ইছা মাহমুদ (৫৭) ও মরিয়ম (৪৮) দম্পতি এসেছেন চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ নিয়ে। প্যারামেডিক রওশন আরা খানম তাঁদের ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তিনি এই দম্পতিকে বেশ কিছু পরীক্ষাও দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ওই দম্পতির খরচ হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। তাঁরা বলেন, ‘এহানে চিকুনগুনিয়ায় ফ্রি চিকিৎসা পাওন যায় হুইন্যা আইলাম। তাও কত্তগুলা ট্যাকা লাগল।’
এখানে ঠিকমতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আবার এলেই বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া হয়—এমন অভিযোগ স্থানীয় অনেকের। তাঁদের একজন রফিকুল হক। তিনি বলেন, ‘ভালো হইলে তো রুগী আসত।’ আরও স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই সেবাকেন্দ্র নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টির কথা বলেন।
গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু সেবা নিয়েছে। তাদের সবাইকেই সেবা দিয়েছেন একজন প্যারামেডিক। গত শনিবার সেবা নিতে আসা ৫৬ জনকেও তিনি দেখেছেন।
নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাজেদুল হক বলেন, প্যারামেডিক প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র দিলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিতে পারেন না। প্যারামেডিক রওশন আরা খানম বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দিয়েছেন রোগীকে—এই তথ্য জানানোর পর তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাজেদুল হক বলেন, প্যারামেডিক নিকটস্থ নগর মাতৃসদনের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাসের (জুলাই) ১৪ তারিখ থেকে চিকিৎসক ছুটিতে আছেন। পাশাপাশি, পরামর্শক গত মার্চ থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তখন থেকে প্যারামেডিককে দিয়েই কাজ চলছে। অথচ কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা।
চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদুল হক বলেন, ‘আগের চিকিৎসককে নিয়ে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রজেক্ট এক্সটেনশন ফেজ চলছে। এটা হলেই নতুন চিকিৎসক নেওয়া হবে।’
দোতলার একটি ছোট ফ্ল্যাটের কয়েকটি কক্ষে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সব কাজ চলে। একই কক্ষে অভ্যর্থনাকারী থেকে শুরু করে সুপারভাইজারসহ পাঁচজনের বসার ব্যবস্থা। আবার এই কক্ষেই চলে ওষুধ বিক্রির কাজ।
কারা আসেন, কী সেবা পাওয়া যায়
স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে চিকিৎসা নিতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষই বেশি আসে। নারীরা গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা বেশি নেন এখানে। সেবাগ্রহণকারীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু অপুষ্টির শিকার। আর এর বড় কারণ বাল্যবিবাহ।
প্যারামেডিক রওশন আরা খানম জানান, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিতে অনেকে আসেন। একটি বড় সংখ্যক দম্পতি আসেন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য। তিনি জানান, এ ছাড়া ডায়রিয়া, ঠান্ডা, জ্বর, কাশির সমস্যায় ভোগা শিশুদের নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। তবে প্রায় সব মায়ের একটি সাধারণ অভিযোগ থাকে, ‘বাচ্চা খায় না’। রওশন আরা খানম বলেন, অনেক মা খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন না। অনেকে আবার জানেনই না।
৪৫ টাকার টিকিট কেটে এখানে চিকিৎসা নেওয়া যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রাথমিক পরীক্ষাগুলোও করানো হয়। বাজারমূল্য থেকে ১০ শতাংশ কম মূল্যে ওষুধ কেনার সুবিধা আছে। এখানে মূলত ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিবায়োটিক ও শিশুদের ওষুধ পাওয়া যায়।