04/20/2025 ‘আমি আছি বলে তুই এখনো আস্ত আছোস’
জবি প্রতিনিধি
১৯ মে ২০২৩ ১৬:২৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের ১২০৩ নং নিজ কক্ষে আটকে রেখে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হলের একাধিক ছাত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনা আদ্যপ্রান্ত বিষয় জানতে গেলে ১৮ মে (বৃহস্পতিবার) একান্ত সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকারে নির্যাতনের লোহমর্ষক বর্ণনা দেন হাফসা বিনতে নূর। নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাফসা একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নির্যাতনের একপর্যায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী নাজমুন নাহার স্বর্ণা পাটোয়ারী বলেন, আমি আছি বলেই তুই এখনো আস্ত আছস, আমি বললে আমার মেয়েরা তোর প্যান্ট খুলে নেবে। নির্যাতনের শিকার হাফসা বিনতে নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি শুরু কয়েকদিন আগে থেকে। মঙ্গলবার রাতে যখন রুমে আসি তখন আমার রুমমেট রেবেকা তার সিটে বসা ছিল, তখন সে জিজ্ঞেস করে আপনি কি ব্যস্ত, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি আমার সাথে কোনো বিষয়ে কথা আছে কিনা, আমাকে একটু সময় দাও ফ্রেশ হয়ে কথা বলতেছি। একথা বালার পর সে রাগান্বিত হয়ে ছাত্রলীগের মেয়েদের ডেকে নিয়ে আসে, পরে ওই ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাকে বলে এইটা কি তোর বাপের রুম। তখন সাথে আমার রুমমেট থাকায় ওরা আমাকে কিছু বলেনি যখনই আমার রুমমেট রুম থেকে বের হয়ে যায় তখনই রুমের দরজা লক করে সেখানে আমাকে প্রায় ৩ ঘন্টা আটকে রাখে। তারপর আমার গায়ে হাত তুলে,অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করতে থাকে আমি সিট থেকে নামতে চাইলে তারা আমাকে আরও মারতে থাকে। আর অন্যদিকে নিনজা শিকদার ভিডিও ধারণ করে বলে ওই তুই এমন করিস কেন? একপর্যায়ে আমাকে চুলের মুঠি ধরে মারবে বলে হুমকি দিতে থাকে। তারপর আমি স্বর্ণাকে বলি ওদেরকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে, তখন স্বর্ণা বলেন আমি যদি চলে যাই তাহলে কি ওরা তোকে ছেড়ে দিবে? তোর ভাগ্য ভালো যে এখনো ওরা তোর প্যান্ট খুলে নাই।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সহকারী হাউজ টিউটর মানসুরা বেগম ম্যাম আসেন। তার সামনেও তারা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ম্যাম তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। ম্যাম আমার সব কথা না শুনে উল্টো আমাকে দিয়েই স্যরি বলায়। এ ঘটনায় আমি মানসিভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ি। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
হাফসার কাছে প্রশ্ন করা হয় হল প্রভোস্ট যে সমঝোতা করে দিয়েছেন এরপরেও কেন অভিযোগ আছে? এ নিয়ে তিনি বলেন, ম্যাম বলেছেন ভবিষ্যতে কেউ এমন করলে তার সিট বাতিল হবে কিন্তু আমার গায়ে যে হাত তোলা হলো এ নিয়ে ত ম্যাম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, আমি খুব শঙ্কিতবোধ করছি।
উক্ত ঘটনা নিয়ে গত ১৭ মে নাজমুন নাহার স্বর্ণা বলেছিলেন, আমি হাফসার রুমে গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে খাবার খেতে নিচে চলে আসি, অভিযোগকারী ঐ মেয়েকে আটকে রেখে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি। ১৮ মে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজি ১৮ মে (বৃহস্পতিবার) জবি প্রক্টর অফিসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল হাউজ টিউটরদের উপস্থিতিতে বলেন, প্রভোস্ট ম্যামের কাছে দুপক্ষ যেহেতু বিচার মেনেছে এরপরও যেহেতু বিষয়টা জাতীয় ইস্যুতে পরিনত হয়েছে তাই এখন হয় অভিযোগকারী মেয়েকে বহিষ্কার করবেন না হয় যারা উস্কানী দিচ্ছে তাদের খুজে বের করবেন।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.দীপিকা রাণী সরকার বলেন, গতকাল বিষয়টি সমাধান করে দেওয়া হয়েছে এরপর কেউ হলে বিশৃঙ্খলা করে তার সিট বাতিল করে দেওয়া হবে।