নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য খেলা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত এই নোংরা খেলায় মেতেছে। পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের ভৌগলিক সীমা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিরোধীদের নজর পড়েছে আমাদের দেশের ওপর। তারা যে কোনো মূল্যে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে চায়। তবে আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আগামী নির্বাচন তো দূরের কথা, এরপরের নির্বাচনেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

আজ শনিবার (৩ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার আরকে ল্যান্ড পার্কে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।

নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিক হুমকির বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থানে নেই। কেউ যদি আমাদের বলে, ‘শাটআপ, তাকে জবাব দেবেন ইউ শাটআপ।’ কারণ বাংলাদেশ এখন কারও ওপর নির্ভরশীল দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ের ওপর ভর করে চলে। আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি, কর্ণফুলি ট্যানেল করেছি। আরও কত শত উন্নয়ন হচ্ছে। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি না হলে এই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আজকে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা অকল্পনীয়।

তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালের পর যে অত্যাচার হয়েছে তা আমরা ভুলি নাই। ওই ৫ বছর আমাদের অনেক নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। মা-বোনদেরও রেহাই দেয়নি। তারা বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল। তাদের এই অত্যাচরের ফলাফল জনগণ এখন তাদের দিয়ে দিচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেন, আমরা কাউকে কোনো আঘাত করি না। সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। শয়তান শয়তানি করবে। তাই আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। ওই খুনিরা আবার বের হয়ে এসেছে। তারা এখন আবারও ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে। সব এলাকার খবর রাখি। আমাদের সাচ্চা আওয়ামী লীগের কর্মী দরকার। যারা গা বাঁচাতে বিএনপির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখবেন তাদের আমার দরকার নাই।

তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপি-জামায়াতিদের স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় মিছিল-সমাবেশের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন। আমাদের ভেতর যেমন আপনাদের ২-১ জন গুপ্তচর আছে, ঠিক তেমনি আপনাদের দলের ভেতরে আমার ২-১ শ গুপ্তচর আছে। খবর পেয়ে সেদিন পার্লামেন্ট থেকে আমি একা শামীম ওসমান চাষাঢ়ায় অবস্থান নিয়েছিলাম। সেদিন আমাকে একা দেখেই মিটিং মিছিল শেষ করে পালিয়েছিলেন। আর আমার এই ভিমরুলের চাক যখন মাঠে নেমে যাবে তখন কিন্তু রাস্তাতো দূরের কথা ঘর-বাড়িতেও থাকতে পারবেন না। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে, সীমা লঙ্ঘন করবেন না। সাবধান। 
 
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি লোকাল পত্রিকা আছে। পত্রিকাটি জামায়াতের অর্থায়নে চলে। তারা আমাকে নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে। ওই পত্রিকাটিতে নিউজ দেখলাম, আমার আমেরিকার ভিসা নাকি বাতিল হয়ে গেছে। আপনাদের বলতে চাই, আমার ভিসা ২০২৬ সাল পর্যন্ত আছে। তারা আবার নিউজ করেছে শামীম ওসমান তুরস্কের পাসপোর্ট নিয়ে নাকি ইউরোপ ঘুরছে। তাদের বলতে চাই, তুরস্কের পাসপোর্ট নিয়ে ইউরোপ ঘুরা সম্ভব না। আমি ইউরোপরে ভিসা নিয়েই সেখানে ঘুরে এসেছি। আমার ভিসার মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত আছে, তা আমি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দকে দেখাবো। আমার ভিসা বাতিল হয়েছে কিনা তখন তা প্রমাণ হবে। আরেকটা কথা, আপনি হলুদ সাংবাদিকতা করবেন আপত্তি নেই, করেন। কিন্তু  হলুদ সাংবাদিকতা করে প্রকৃত সাংবাদিকদের সম্মান নষ্ট করবেন না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন শাহ, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, রুহুল আমিন মোল্লা, আনোয়ার ইসলাম, কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) মনোয়ারা বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন,  নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার রহমান বাপ্পি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন প্রমুখ।