04/21/2025 আনসার আল ইসলামের সঙ্গে ‘সহযোগিতা চুক্তি’ করেছিল হিন্দাল শারক্বিয়া
আহসানুল ইসলাম আমিন
২৪ জুলাই ২০২৩ ১৯:৩৫
প্রধান প্রতিবেদক:
রস্পরিক সহযোগিতায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদন করেছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া। ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ আনসার আল ইসলামের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে আনসার আল ইসলামের শারক্বিয়াকে ১৫ লাখ টাকাও দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, শারক্বিয়ার সদস্যদের আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেয় আনসার আল ইসলাম। আর এর বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ কথা দেয় শারক্বিয়া।
আজ সোমবার (২৪ জুলাই) ভোরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র আমিরসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রাজধানীর কাওরান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শারক্বিয়া’র আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ পার্বত্য অঞ্চলের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং-এর সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করে ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে।
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযানে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী পুস্তিকা ও নগদ অর্থ উদ্ধারের কথা জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো, কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ (৩৪) এবং মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলি।
গ্রেফতারকৃত আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন জানান, মাহমুদ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতো। সে এর আগে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য ছিল। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর পরিচয় হয়। পরে তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আরও এক বৈঠক করে নতুন সংগঠন তৈরি ও বিস্তারের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কার্যক্রম শুরু করে।
মাহমুদ মূলত কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওই সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে জানিয়ে র্যাব বলছে, সে ২০১৬ সালের পরে সে বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ২০২০ সালে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বান্দরবানের গহীন এলাকায় চলে যায়। সেখানে আসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে প্রায় এক মাস বিভিন্ন সামরিক কৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেয়।
পরে অর্ধকোটিরও বেশি টাকায় কুমিল্লার প্রতাপপুরে তার বাড়িসহ জমি বিক্রি করে। এই জমি বিক্রির কিছু টাকা সংগঠনকে দেয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কিনে ওই বছরই সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পোল্ট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদি পশুর খামার করে।
তিনি আরও বলেন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র আগের আমির ছিল মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে সংগঠনের অন্যান্য সূরা সদস্য ও সদস্যদের সিদ্ধান্তে মাহমুদকে আমির নির্বাচন করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তার সঙ্গে কেএনএফ সদস্যদের পরিচয় হয় এবং কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং-এর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক হয়।
২০২১ সালে কেএনএফ-এর ছত্রচ্ছায়ায় বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত ঠিক হয়, কেএনএফ ২০২৩ সাল পর্যন্ত জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে। বিনিময়ে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও খাবার খরচ বাবদ প্রতি মাসে তিন থেকে চার লাখ টাকা বহন করতো শারক্বিয়া। আমির মাহমুদের নির্দেশনায় দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হতো। সংগ্রহকৃত অর্থ দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের খরচ ও সারা দেশে অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হতো। এছাড়াও, তার নির্দেশনাতেই কেএনএফ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি অগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়; যা প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছিল। আমির মাহমুদের নির্দেশনায় নাথান বমকে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় সংগঠনের অর্থায়নে একটি বাসা ভাড়া করে দেওয়া হয়; যেখানে নাথাম বম পরিবারসহ মাঝে মধ্যে অবস্থান করতো। তার নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনসার হাউজ তৈরি এবং পরিচালিত হতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবের কাছে স্বীকার করে যে, ভুল ঝুঝিয়ে তাদের কিছু সদস্যকে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণে নেওয়া হতো। প্রশিক্ষণ চলাকালে তারা ফিরে আসতে চাইলে বা পালানোর চেষ্টা করলে মাহমুদের নির্দেশনায় তাদের শাস্তিস্বরূপ নিজেদের তৈরি জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়। আর সদস্যদের কেউ দ্বিতীয় দফায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বা বিদ্রোহ করলে গুলি করে হত্যারও ঘোষণা দিয়েছিল মাহমুদ।