04/21/2025 বাংলাদেশের মানবাধিকার অনেক দেশ থেকে উন্নত: হাছান মাহমুদ
আহসানুল ইসলাম আমিন
২৮ জুলাই ২০২৩ ০৫:৩৫
ডেক্স নিউজ :
কলকাতা সফররত বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার অনেক দেশ থেকে উন্নত। চার দিন সফরে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘ বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। সিটি করপোশেন নির্বাচনে কমিশনের আহ্বান সত্ত্বেও বিএনপি যেভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে, বয়কটের আহ্বানের পরও, মানুষ ভোট দিয়েছেন। আপনাদের এখানেও সদ্য স্থানীয় স্তরে নির্বাচন হয়েছে। তাতে কী হয়েছে, আপনারা সবাই জানেন। আমাদের ওখানে ভোটকেন্দ্রের বাইরে একজন প্রার্থীকে হেনস্থা করা হয়েছিল। অভিযোগ পাওয়া মাত্র সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়। এটা তার উদাহরণ মাত্র।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সম্ভব নয় এই দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার অনেক দেশ থেকে উন্নত। আমেরিকায় কয়েকদিন পর পর স্কুলগুলোতে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে, যেভাবে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা হয়েছে, সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যেভাবে ক্যাপিটাল হিলে হামলা চালালো, পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে হত্যা করলো, সেরকম কোনও ঘটনা বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলে কোথাও হয়নি। আমেরিকায় যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়, তার তুলনায় আমাদের দেশে মানবাধিকার ভালো। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, নরওয়ের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে পুলিশের অত্যাচার হয়েছে, তা গোটা বিশ্ব দেখেছে, সেই তুলনায় বাংলাদেশে কিছুই হয়নি।’
বিএনপির সহিংসতা নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বে যে সহিংসতা হয়েছিল, প্রায় এক শতাধিক মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, ট্রেন বাস লঞ্চে অগ্নিসংযোগ ঘটনা হয়েছিল। সেখানেও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বাতাস এসেছিল, সেটা এখন সরে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। তাই এখন বাতাস দিয়েও কোনও লাভ হবে না। আমি মনে করি এই অঞ্চলে অন্য অঞ্চলের কেউ এসে নাক গলাক, তা আমরা চাই না। সেটা কি সমীচীন হবে?’
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে। যেভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে যে চলতি সরকার থাকে, সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে। যেভাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপানে হয়ে থাকে। ঠিক সেভাবেই শেখ হাসিনার সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘১৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ অবস্থান করছে। আমরা বিশ্বের ঘন বসতি পূর্ণ দেশের মধ্যে একটি। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সেখানে ১৫ লাখ শরণার্থী আমাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ। তার ওপর বৈদেশিক সাহায্য আগের মতো আসছে না। বিষয়টি নিয়ে সবসময় ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছি। তারাও তাদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে।’
ভারত প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে, আমাদের দেশ আলোকিত হচ্ছে। সম্প্রতি রুপি ও টাকার বিনিময়ে দুই দেশের বাণিজ্য হচ্ছে। এটা কোনোদিন ভাবা যায়নি। এতে করে দুই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এটা হত না। কারণ অন্য যারা রাজনীতি করে তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ভারত বিরোধিতা, আওয়ামী লীগকে গালি দেওয়া যে আমরা নাকি হিন্দু বিরোধী দল। ভোট আসলেই এই গালি শুনতে হয়। বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, ভারতের বিরোধিতা শুরু হয়। কয়েকদিন পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন, ইতোমধ্যে এগুলো শুরু হয়ে গেছে। তাই তারা যদি ক্ষমতা থাকত তাহলে ভারতের সঙ্গে কখনোই আমাদের সম্পর্ক এই পর্যায়ে আসতো না। এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই।’
বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে বিশ্বের অর্ধেক মানুষই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশ একটি ঘন বসতি পূর্ণ দেশ। ঢাকা শহরও বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহর গুলোর মধ্যে একটি। খুব অল্প সময়ে ঢাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যতই পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই পরিকল্পনা না মেনে অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে গেছে। তারপরও আমরা যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবেই আমরা ডেঙ্গুকেও সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবো।’
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, আশিকুর রহমান, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক। এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার নন্দনে ৫ম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।