04/19/2025 মহিউদ্দিন চৌধুরী নামের নক্ষত্রের বাংলার রাজনৈতিক আকাশ থেকে পতন
Mahbubur Rohman Polash
১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২২:৩২
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোররাত ৪.৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের সিংহ পুরুষ বীর চট্টলার সাবেক নগর পিতা ও চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি জনপ্রিয় জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বন্দরনগরীর এই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনবার নির্বাচিত এই মেয়রের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহীরা গ্রামে জন্ম নেন এই নেতা। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। মরহুমের বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগের সমস্যায় ভুগছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। গতকাল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ভোররাতে তিনি মারা যান।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।চট্টগ্রামে গিয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি আজ শুক্রবার সকালে ওবায়দুল কাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাসায় যান। এ সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান। কিছু সময় তিনি সেখানে অবস্থান করেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সান্ত্বনা দেন। ।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাসপাতাল ও তাঁর বাসায় ছুটে যান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির নেতারাও যান। আসরের নামাজের পর নগরীর লালদীঘি ময়দানে জানাজায় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদের,সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম,হাছান মাহমুদ চৌধুরী,যুবলীগ চেয়ারম্যান আলহাজ্জ ওমর ফারুক চৌধুরী,যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্জ হারুন অর রশীদ,যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী শাওন এমপি, যুবলীগের প্রচার সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ,বিএনপি ,জাতীয় পার্টিসহ দল মত নির্বিশেষে লাখো জনতা অস্রু সিক্ত নয়নে অংশ গ্রহন করে।জানাযা শেষে চশমা হিলের পারিবারিক কবরস্থানে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দাফন করা হয়। তার আগে বাদ জুমা নগরীর দলীয় কার্যালয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায় নগরবাসী।
দুপুরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসার সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মন্ত্রী হতে বলেছিলেন, তিনি রাজি হননি। আমাদের নেত্রী তাঁকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে বলেছিলেন, তিনি রাজি হননি।”
“তিনি বলতেন, আমার স্বপ্ন, আমার ধ্যান, আমার প্রাণ, আমার সবকিছুই হচ্ছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের বাইরের নেতা হওয়ার আমার কোনো স্বপ্ন নেই। এবং বারবার নেত্রী তাঁকে বলেছেন, সেই অনুরোধ তিনি রাখেননি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, “তাঁর হৃদয়জুড়ে, অন্তরজুড়ে শুধুই চট্টগ্রাম, এই মাটি এই মানুষ তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষ তাঁকে কত ভালোবাসে, আজকে চট্টগ্রামে যে বাঁধভাঙা শোককাতর মানুষ, সেটা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেল। চট্টগ্রাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর, মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের।”
সাবেক মেয়রের মূল্যায়ন করে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরী আমৃত্যু মানুষের সঙ্গে ছিলেন এবং মানুষের সঙ্গে থাকাটাকে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। রাজনীতির শুরু থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছিলেন। সেই আদর্শের দ্বারাই তিনি পরিচালিত ছিলেন। সেই আদর্শের বিস্তার লাভের জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন।”
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, “সবার অভিভাবককে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। চট্টগ্রামের মানুষ ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা মুহূর্তে, প্রত্যেকটা ক্ষণে ক্ষণে মনে করবে আমাদের একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রয়োজন ছিল।”
মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষের মাথার ওপর ছায়া হিসেবে ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে সেই ছায়া থেকে, ‘শুদ্ধ এবং আধুনিক রাজনীতির সঙ্গে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ বিশ্লেষণে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যে আশা ছিল তা ব্যহত হবে, “এই শূন্যতা মাপার কিছু আমাদের কাছে নেই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর যে শূন্যতা, সেটা পূরণ করার না।”সেটা মনে করেন চট্টলার জনতা।