03/13/2025 বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই
odhikarpatra
১২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪২
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই।
তিনি আজ বুধবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৩১ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বেসিসের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সৈয়দ মঞ্জুরের পরিবার তাঁর মরদেহ আজই ঢাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে।’
তিনি বলেন, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বয়স বৃদ্ধির কারণে, এলাহীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। প্রথমে তিনি ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলেও পরে তার পেটে সংক্রমণ দেখা দেয়।’
সৈয়দ আলমাস কবির তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মৃত্যুর সময় তার দুই সন্তানই বাবার শয্যার পাশে ছিলেন।’
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠক ছিলেন। বাণিজ্য ও শিল্পে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ কর্তৃক ‘২০০০ সালের ব্যবসায়িক নির্বাহী’ এবং ‘২০০২ সালের ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব’ পুরস্কার।
একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি হওয়ার পাশাপাশি, তিনি দু’বার (১৯৯৬ এবং ২০০১) বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর মঞ্জুর এলাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পর তিনি বহুজাতিক কোম্পানি পাকিস্তান টোব্যাকোতে যোগদান করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি অ্যাপেক্স ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার উদ্যোক্তা যাত্রার ভিত্তি স্থাপন করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি পরবর্তীতে জাপানে জুতা রপ্তানির জন্য অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার প্রতিষ্ঠা করেন। জাপানি নির্মাতাদের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে এপেক্স ফুটওয়্যার বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি শিল্পে একটি অগ্রণী কোম্পানিতে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে জুতা রপ্তানির ক্ষেত্রেও মঞ্জুর এলাহী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এক পর্যায়ে, তিনি ইতালীয় পাদুকা ব্যবসায়ী আদেলচির সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে তার উপস্থিতি আরও জোরদার করেন।
মঞ্জুর এলাহীর পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাইনান গ্রামে। তিনি ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করনে। তাঁর বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী কলকাতায় অবিভক্ত বাংলার প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বড় ভাই বিচারপতি এস এ মাসুদ কলকাতা হাইকোর্টেও প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং ‘পদ্মভূষণ পুরস্কার’ এবং ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু’ সম্মানে ভূষিত হন। তাঁর অন্যান্য ভাইদের মধ্যে সৈয়দ এ মওদুদ এবং ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান, যখন তাঁর তৃতীয় ভাই সৈয়দ এ মনসুর পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।