04/19/2025 নিহত সাহায্যকর্মীদের শেষ মুহূর্তের ফুটেজ উদ্ধার, দেখা গেল যে লোমহর্ষক দৃশ্য
odhikarpatra
৬ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৪৭
গাজায় অন্যান্য উদ্ধারকারীদের সঙ্গে নিহত একজন সাহায্যকর্মীর সেলফোন থেকে একটি ভিডিও উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)। শনিবার (৫ এপ্রিল) ভিডিওটি তারা প্রকাশও করেছে। এতে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুল্যান্স ও জ্বলজ্বল করা জরুরি আলোর মধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ ও পিআরসিএস জানিয়েছে, ২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এলোপাতাড়ি হামলা’ চালায়নি, বরং ‘সন্দেহজনক যানবাহনে’ আসা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়েছে।
কিন্তু পিআরসিএস যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে তাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবির বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে হেডলাইট এবং জরুরি আলো স্পষ্টভাবে জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওতে যে লোমহর্ষক দৃশ্য দেখা যায়
ভিডিওটি দৃশ্যত একটি চলন্ত গাড়ির ভিতর থেকে শুট করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, একটি লাল ফায়ারট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো রাতের কোনো এক সময় চলছে। রাস্তার পাশে আরেকটি গাড়ির পাশে থামে গাড়িগুলো। পরে দুজন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেন। এরপরই প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়।
এতে দু’জন চিকিৎসকের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। একজন বলছেন, ‘গাড়ি গাড়ি’ এবং অন্যজন উত্তর দিচ্ছেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরে, গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় এবং পর্দা কালো হয়ে যায়।
এ সময় একজন ডাক্তারকে শাহাদা পাঠ করতে শোনা যায়, যা মুসলমানরা মৃত্যুর মুখে বলে। তিনি বারবার বলছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মোহাম্মদ তার বার্তাবাহক।’ এমনটি বলতে বলতে তার কণ্ঠ ভয়ে কাঁপছে কারণ সেখানে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে ক্ষমা করুন মা কারণ আমি এই পথ বেছে নিয়েছি, মানুষকে সাহায্য করার পথ।’ এরপর তিনি বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ, আমার শাহাদাত কবুল করুন এবং আমাকে ক্ষমা করুন।’ ফুটেজ শেষ হওয়ার ঠিক আগে ইসরায়েলি সৈন্যদের উল্লেখ করে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ইহুদিরা আসছে, ইহুদিরা আসছে।’
যা বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পিআরসিএস
সাহায্যকর্মীদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক নিন্দার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ওসিএইচএ-এর প্রধান জোনাথন হুইটল বলেছেন, ‘নিহতদের মরদেহ ইউনিফর্ম ও হাতে গ্লাভস পরা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’
পিআরসিএস জানিয়েছে, তারা নিহত সাহায্যকর্মীদের একজন রিফাত রাদওয়ানের ফোনে ভিডিওটি পেয়েছে। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলের বক্তব্য যে মিথ্যা তা এই ভিডিও দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে। এই ফুটেজ সত্যকে উন্মোচিত করে এবং মিথ্যা বর্ণনাকে ভেঙে দেয়।’
নিহতদের মধ্যে আটজন পিআরসিএস কর্মী, ছয়জন গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার সদস্য এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার একজন কর্মী ছিলেন। তাদের মৃতদেহ রাফাহ-এর কাছে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, যাকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) গণকবর হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, সেদিন ভোরবেলা ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা প্রথম দলটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সহকর্মীদের খোঁজে এগিয়ে যাওয়া আরো কয়েকটি উদ্ধার ও সহায়তা দলের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।
পিআরসিএসের মতে, রাফাহতে বোমা হামলায় আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের জরুরি কলের প্রেক্ষিতে দলটিকে পাঠানো হয়েছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এই হামলার নিন্দা করেছেন এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য "যুদ্ধাপরাধ" নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তুর্ক হামলার একটি স্বাধীন, এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘সম্প্রতি ১৫ জন চিকিৎসা কর্মী ও মানবিক সহায়তা কর্মীদের হত্যার ঘটনায় আমি আতঙ্কিত, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে আরও উদ্বেগ বাড়ায়।’
একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতি এড়াতে মৃতদেহগুলোকে বালি ও কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।