04/23/2025 কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
odhikarpatra
২২ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৩
কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গত ১৯ এপ্রিল শনিবার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। এই সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে-সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘জনপ্রশাসনে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অস্থায়ী বিশেষ পদক্ষেপের নীতি নির্ধারণ যেমন, শূন্যপদ পূরণে যোগ্য নারী প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া, নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সকল মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কর্মরত নারীর কাজের জন্য অনুকূল। পরিবেশ, যথা: শিশু-দিবাযত্ন, শিশুকে স্তনপান, পৃথক টয়লেট, নিরাপদ পরিবহণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ।’
এছাড়াও সুপারিশে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮, সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ১৯৭৯ এবং শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা ২০১৮ সংশোধন করে গ্রহণযোগ্য আচরণ, জবাবদিহিতা, অভিযোগ ও প্রতিকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা।’
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এই সংস্কার কমিশন মোট ৪৩টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে নয়টি সভা করে তারা। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ ও নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্যও কল্যাণকর হবে।’
তিনি জানান, সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু এই সরকারই করে যেতে পারবে, কিছু পরের নির্বাচিত সরকার করতে পারবে এবং নারী আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে