05/26/2025 অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: তারেক রহমান
odhikarpatra
২৫ মে ২০২৫ ২০:৫৯
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশে বিদেশে সম্মানিত দক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের নেতৃত্বে জাতি অবিলম্বে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, জনগণকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই। এই সরকারের মাধ্যমেই দেশের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পাবে জনগণ।’
আজ রোববার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করে আবারও রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের তারিখ, সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ যারা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমরা আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।
তারেক রহমান বলেন, অতীতেও পরাজিত স্বৈরাচারের আমলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলো নানা রকম দমন পীড়ন এবং ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। এনসিপিও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া শাসন- শোষণ হটিয়ে আমরা মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।
দেশের জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার যেন আর কোনো রূপে কোনোক্রমেই ফিরতে না পারে, এই সময় সেটিই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। দেশে স্বৈরাচার রুখে দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশের জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ, সরকার গঠিত হলে অবশ্যই সেটি জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।’
রাষ্ট্রের নাগরিকদের রাষ্ট্র ক্ষমতা নিশ্চিত থাকলে সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করা সহজ হয় না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের চরিত্র যেমনই হোক না কোনো সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার নিজের অজান্তেই স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। এবং এ কারণেই হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে হলেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার। এর কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে আমার কাছে মনে হয়, পুথিগত সংস্কারের চেয়েও প্রায়োগিক সংস্কার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে এবং তাদের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের রাগ কিংবা মান অভিমানের কোনো সুযোগ নেই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈধতার সংকট নেই তবে অবশ্যই এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি মূলক নয়। এ কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হয় না; এবং হবেও না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকার সকল দায়িত্ব পালন করবে, জনগণ এমনটা আশা করে না। তবুও সরকারের নিয়ম মাফিক কিছু কাজ করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ম মাফিক চলতি বছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে প্রতিটি বছর জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘাটতি বাজেট হচ্ছে মূল প্রতিপক্ষ। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআর এর হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাশের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছে এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকার রাখতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘একটি বিষয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বাংলাদেশে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরনের অযুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাঁবেদার অপশক্তির পুনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজ নিজ দলীয় আদর্শ এবং কর্মসূচির বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও; আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ফ্যাসিবাদ উত্থান মোকাবেলায় একতরফা ইস্যুতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এসপিপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।