প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনী রোববার ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রসহ তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় ‘অত্যন্ত সফল আক্রমণ’ চালিয়েছে। তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বিমান অভিযানে যোগ দিয়েছে ওয়াশিংটন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ তথ্য জানায়,  ট্রাম্প বলেন, ফোর্দোর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ‘পূর্ণ বোমা’ ফেলা হয়েছে এবং হামলার আকস্মিক ঘোষণার পর শনিবার ওয়াশিংটন সময় রাত ১০ টায় (গি্িরনচ মান সময় রোববার ০২০০ টায়)  তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার প্রস্তুতি নেন।

ট্রাম্পের এই অঞ্চলে তার দেশের আরেকটি ‘চিরচরিত যুদ্ধ’ এড়াতে প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মার্কিন সামরিক জটলা দেখা দিল। ওয়াশিংটন জড়িত হলে ইরান এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও এসফাহান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার ওপর আমাদের অত্যন্ত সফল আক্রমণ সম্পন্ন করেছি।’

‘ফোরদোর প্রাথমিক স্থানে বোমার একটি পূর্ণাঙ্গ পেলোড নিক্ষেপ করা হয়েছে।’

ট্রাম্প আরও বলেনে, ‘সমস্ত বিমান নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে। আমাদের মহান আমেরিকান যোদ্ধাদের অভিনন্দন।’

ইরানি মিডিয়া নিশ্চিত করেছে যে ফোরদো প্ল্যান্টের অংশের পাশাপাশি ইসফাহান ও নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতেও আক্রমণ করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, হামলার পর ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও হামলার আগে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসরাইলকে ‘সতর্কতা’ জানিয়েছিল।

হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ ঘোষণা করে দ্বিতীয় পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ করতে ইরানকে এখনই সম্মত হতে হবে।’

তিনি এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং বিশ্বের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শনিবারের শুরুতে খবরে বলা হয়, তথাকথিত ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা বহনকারি মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

কোন ধরণের মার্কিন বিমান বা যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তার উল্লেখ করেননি ট্রাম্প

ট্র্যাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে’ ইসরাইলের অভিযানে যোগ দেবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবেন তবে সিদ্ধান্তটি তার অনেক আগেই এসে গেল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য আরো তীব্র করেছেন, তিনি আরো জোর দিয়ে বলেছেন এটি কখনও পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শনিবার সকালে সতর্ক করে দেন যে ইসরাইলের নয় দিনের বোমা হামলা অব্যাহত থাকলে ‘আরও ভয়াবহ’ প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ‘কোনও পরিস্থিতিতেই’ তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না। তিনি জানান, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে। 

১৩ জুন ইসরাইল তার বিমান অভিযান শুরু করার পর থেকে ইসরাইল এবং ইরান একের পর এক ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। 

শনিবার, ইসরাইল জানিয়েছে, তারা দ্বিতীয়বারের মতো ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, একটি সেন্ট্রিফিউজ তৈরির কর্মশালায় আঘাত হেনেছে। 

পরে শনিবার ইরানের মেহর সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইল সামরিক ঘাঁটির অবস্থান দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী শিরাজে আঘাত হেনেছে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড  রোববার ভোরে ঘোষণা করে, ইসরাইল জুড়ে ‘কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে’  ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ হামলা চালানো হয়েছে।

ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা অস্বীকার করেছে এবং শনিবার পেজেশকিয়ান বলেছেন যে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অধিকার ‘হুমকি বা যুদ্ধের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া যাবে না।’

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, তিনি আরও বলেন, ফরাসি  প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে এক ফোনালাপে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা কোনও অবস্থাতেই পারমাণবিক কার্যক্রম শূন্যে নামিয়ে আনতে রাজি নই।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শনিবার অর্গা নাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) বৈঠকে অংশ নিতে ইস্তাম্বুলে ছিলেন।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ কূটনীতিকরা শুক্রবার জেনেভায় আরাকচির সঙ্গে দেখা করেন এবং যুদ্ধের কারণে বিঘ্নিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য তাকে অনুরোধ জানান।

ইয়েমেনে ইরানের হুথি মিত্ররা শনিবার হুমকি দিয়েছে যে ওয়াশিংটন যদি যুদ্ধে যোগ দেয়, তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজের ওপর তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী সংবাদ সংস্থা তাদের সূত্র ও মিডিয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে শুক্রবার জানিয়েছে,  ইরানে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক কমপক্ষে ৬৫৭ জন নিহত হয়েছে।

শনিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরাইলে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছে।

শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ডেমোক্র্যাট হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, ট্রাম্প ‘মধ্যপ্রাচ্যে একটি আশঙ্কাজনক বিপর্যয়কর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার’  ঝুঁকি নিয়েছেন, অন্যদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তার সতর্কতা স্তর বাড়িয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের অনুমতি দিয়েছে।