08/20/2025 মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন
odhikarpatra
২০ আগস্ট ২০২৫ ০৩:৫৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবারই ঘোষণা দিয়েছেন—তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। হোয়াইট হাউস দাবি করছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর মাত্র ছয় মাসেই ছয়টি সংঘাত বন্ধে বা শান্তি স্থাপন প্রচেষ্টায় সফল হয়েছেন। প্রতি মাসে একটি করে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ—এটি নিঃসন্দেহে উচ্চ দাবি। ভারত–পাকিস্তান, ইসরায়েল–ইরান, কঙ্গো–রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড, সার্বিয়া–কসোভো, মিসর–ইথিওপিয়া—এই ছয় দ্বন্দ্বে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ‘ফলপ্রসূ’ বলে দাবি করা হলেও, বাস্তবতা অনেক সময় সেই দাবি ছুঁতে পারেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবারই ঘোষণা দিয়েছেন—তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। হোয়াইট হাউস দাবি করছে, দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর মাত্র ছয় মাসেই তিনি গড়ে প্রতি মাসে একটি করে শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বহুল আলোচিত বৈঠক ঘিরে আবারও সামনে এসেছে এই পুরনো আকাঙ্ক্ষা। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি ইতিমধ্যে ছয়টি সংঘাত বন্ধ করেছেন। ইসরায়েল–ইরান, কঙ্গো–রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড, ভারত–পাকিস্তান, সার্বিয়া–কসোভো এবং মিসর–ইথিওপিয়া—এই দ্বন্দ্বগুলোতে তিনি মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছেন বলে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য। ইউক্রেনেও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আগস্টে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠক এই প্রচেষ্টারই অংশ।
ট্রাম্প যদি সত্যি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, তবে তিনি হবেন এই সম্মান পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট। এর আগে থিওডোর রুজভেল্ট, উড্রো উইলসন, জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা এই পুরস্কার পেয়েছেন। একমাত্র কার্টারই তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এই পুরস্কার পেয়েছিলেন, যা বিতর্কের জন্ম দেয়। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও সেই প্রশ্ন উঠেছে—তিনি কি আসলেই নোবেল পাওয়ার যোগ্য? আসলে শান্তি চুক্তির ছায়ায় ট্রাম্পের পুনরুত্থান ঘটেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবারই ঘোষণা দিয়েছেন—তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। হোয়াইট হাউস দাবি করছে, দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর মাত্র ছয় মাসেই তিনি গড়ে প্রতি মাসে একটি করে শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বহুল আলোচিত বৈঠক ঘিরে আবারও সামনে এসেছে এই পুরনো আকাঙ্ক্ষা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিপয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি ইতিমধ্যে ছয়টি সংঘাত বন্ধ করেছেন।ইসরায়েল–ইরান, কঙ্গো–রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড, ভারত–পাকিস্তান, সার্বিয়া–কসোভো এবং মিসর–ইথিওপিয়া—এই দ্বন্দ্বগুলোতে তিনি মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছেন বলে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য। ইউক্রেনেও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আগস্টে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠক এই প্রচেষ্টারই অংশ। আর একারণেই হোয়াইট হাউসের মতে সাতটি দেশ ও শীর্ষ নেতারা ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছে। তালিকায় আছে:
এদের মধ্যে—
ট্রাম্পের নোবেল প্রচেষ্টাকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েকটি দেশের সরকার বা শীর্ষ নেতাদের আনুষ্ঠানিক সুপারিশ। তালিকায় রয়েছে:
তাঁরা বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা এবং সীমান্ত স্থিতিশীলতায় অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ট্রাম্প নরওয়ের সাবেক ন্যাটো মহাসচিবকে ফোন করে সরাসরি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবি জানান। এই তথ্যই প্রমাণ করে, ট্রাম্প নিজেও চান তাঁর কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে রূপ নিক—শুধু কূটনীতির সফলতা নয়, পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করতে চান।
নোবেল শান্তি পুরস্কার সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়—নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং কিংবা আবি আহমেদের মতো নেতাদের মতো। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের এই চুক্তিগুলো কি সত্যিই টেকসই? নাকি এগুলো নির্বাচনী কৌশলের অংশ?
অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এসব প্রচেষ্টা মূলত প্রচারণামূলক। যেমন ভারত–পাকিস্তান ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ভারত সরকার সরাসরি অস্বীকার করেছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-ঘেঁষা অবস্থান নিয়েও তাঁর উপর প্রশ্ন উঠেছে—শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নাকি ভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণ?
নোবেল বনাম রাজনৈতিক বাস্তবতা: শান্তির পুরস্কার নাকি নির্বাচনী হাতিয়ার?
ইতিহাসে দেখা যায়, নোবেল শান্তি পুরস্কার সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়েছে—নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং বা ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের মতো নেতাদের ক্ষেত্রে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে—তাঁর প্রচেষ্টা আসলেই কি টেকসই শান্তির ভিত্তি তৈরি করছে, নাকি কেবল রাজনৈতিক কৌশল? সমালোচকেরা মনে করছেন, ট্রাম্প শান্তি পুরস্কারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই এই দাবি জোরদার করে। তিনি নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছেন। কিন্তু নোবেল শান্তি পুরস্কার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার ফল নয়। এটি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রচেষ্টার স্বীকৃতি। তাই পুতিনের সঙ্গে বৈঠক ট্রাম্পের জন্য এক প্রকার লিটমাস টেস্ট। এ বৈঠক নির্ধারণ করবে—তিনি সত্যিই শান্তির দূত হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবেন, না কি তাঁর নোবেল স্বপ্ন কেবল রাজনৈতিক নাটক হিসেবেই থেকে যাবে। শান্তি কোনো কূটনৈতিক প্রচারণা নয়, বরং মানবতার দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার। ট্রাম্প সত্যিই নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার হইবেন কি না, তাহা নির্ভর করিবে তিনি বিশ্বশান্তিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, বরং ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণের অঙ্গীকারে রূপান্তরিত করিতে পারেন কি না।
এদিকে ন্যাটোর সাবেক সর্বোচ্চ কমান্ডার জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক সতর্ক করে বলেন, “কোনো বড় বিপর্যয় না ঘটলে ট্রাম্প এই সম্মেলন থেকে সত্যিই সফল হয়ে ফিরতে পারেন।” অর্থাৎ, ইউক্রেন সংকটের কূটনৈতিক সমাধান বা অন্তত আংশিক অগ্রগতি সম্ভব হলে তাঁর শান্তির ইমেজ উজ্জ্বল হবে। তবে ব্যর্থ হলে নোবেল স্বপ্ন আরও দূরে সরে যাবে।
অপরদিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির প্রধান বলেছেন, "প্রতিটি আবেদন কঠোর মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যায়।" যদিও ইতিহাসে অনেক বিতর্কিত প্রার্থীকেও পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তবে তা জনসচেতনতা ও মানবিক অগ্রগতির ধারায়।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও দাবি:
“আমার তো নোবেল চার-পাঁচবার পাওনা!”- এটাই হচ্ছে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বাডি কার্টার গত ২৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে চিঠি লিখেছেন, যাতে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার আহ্বান জানানো হয়। কার্টারের ভাষায়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত নিরসনে ট্রাম্পের ‘অসাধারণ ও ঐতিহাসিক’ কূটনৈতিক নেতৃত্ব এই স্বীকৃতির দাবিদার।
ট্রাম্প নিজেও তাঁর বক্তব্যে একাধিকবার এই দাবিকে সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ থামানোয় তাঁরই মূল ভূমিকা ছিল। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দাবি বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে, তবু ট্রাম্প নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটেননি। বরং তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে বারবার এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন। এক জনসভায় ট্রাম্প বলেন: “ওদের রোয়ান্ডার জন্য আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত। আপনি যদি কঙ্গোর দিকে দেখেন, কিংবা সার্বিয়া-কসোভোর শান্তি প্রক্রিয়া দেখেন—সেখানেও আমার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।”
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন: “সবচেয়ে বড় কাজটা হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে। আমার এটা চার-পাঁচ বার পাওয়া উচিত।” তবে ট্রাম্প কেবল নিজের দাবির জোরে থেমে থাকেননি, বরং তাঁর হতাশাও প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন: “ওরা আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেবে না। কারণ এটা কেবল উদারপন্থীদেরই দেওয়া হয়।” উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্পের সমর্থকেরা “আব্রাহাম অ্যাকর্ড” বা আব্রাহাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমেও তাঁর নাম শান্তিতে নোবেলের সম্ভাব্য প্রাপক হিসেবে তুলেছিলেন। ওই চুক্তিতে ইসরায়েল ও একাধিক আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যা ঐতিহাসিক কূটনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে এখনো পর্যন্ত বারাক ওবামার মতো ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি, যদিও তাঁর সমর্থকেরা মনে করেন—শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা, যুদ্ধবিরতি, এবং মধ্যস্থতায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন—তাই তাঁর নোবেল পাওয়া উচিত। অন্যদিকে, সমালোচকেরা দেখছেন, এটি তাঁর নির্বাচনী প্রভাব বাড়ানোর এক ধরনের আন্তর্জাতিক প্রচারণা।
নোবেল পুরস্কার কোনো কৌশলের হাতিয়ার নয়। এটা মানবতার প্রতি দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি। ট্রাম্প সত্যিই ইতিহাসে ‘শান্তির দূত’ হয়ে উঠবেন কি না, তা নির্ভর করবে তাঁর উদ্যোগগুলো কতটা টেকসই, রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে এবং মানবিক ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর—তা প্রমাণ করতে পারার উপর।
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে,শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যিই নোবেল পুরস্কারের দাবিদার, নাকি এটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ?
— লেখক: ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (লিটু), অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকা্রপত্র, odhikarpatranews@gmail.com