09/18/2025 উত্তর কোরিয়া এটা কি করছে? আবারো জাতিসংঘের অভিযোগ
odhikarpatra
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৫
সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক এক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে যে উত্তর কোরিয়া মানুষের বিনোদনের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে।উত্তর কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠী ক্রমশ কঠোরভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে।এমনকি বিদেশি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক দেখার বা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো অপরাধেও। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের নতুন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত এক দশকে দেশটিতে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিকের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। আজকের পৃথিবীতে কোনো জনগোষ্ঠী এত ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়। উন্নত প্রযুক্তির কারণে নজরদারিও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফোল্কার টার্ক বলেন, যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তবে উত্তর কোরিয়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যে ভোগান্তি, দমন-পীড়ন ও ভয় সহ্য করছে তার মাত্রা আরও বাড়বে।
২০১৫ সালের পর থেকে অন্তত ছয়টি নতুন আইন চালু করা হয়েছে, যেগুলোর আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সম্ভব। এর মধ্যে বিদেশি চলচ্চিত্র বা টেলিভিশন কনটেন্ট দেখা বা অন্যকে দেওয়াও এখন মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। ২০২০ সাল থেকে এ ধরনের অপরাধে প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা বেড়েছে বলে পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিসংঘকে জানিয়েছেন। একজন নারী পালিয়ে এসে জানান, তাঁর তিনজন বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেন্ট দেখার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পান। এক ২৩ বছর বয়সী বন্ধুর মৃত্যুদণ্ডের বিচার তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। ২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় এলে জনগণের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। বরং ২০১৯ সালে পশ্চিমা দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ করে কিম পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে মনোযোগ দেন। ফলে মানুষের জীবনমান অবনতির দিকে যায়। পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায় না, তিনবেলা খাওয়া এখন অনেকের কাছে বিলাসিতা। কোভিড মহামারির সময় খাদ্যাভাব চরমে পৌঁছায় এবং অনেকে না খেয়ে মারা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দরিদ্র পরিবারের মানুষদের নির্মাণ ও খনির মতো বিপজ্জনক কাজে পাঠানো হয়। এমনকি এতিম ও পথশিশুদেরও এসব কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুকেও সরকার ‘কিম জং উনের জন্য আত্মত্যাগ’ হিসেবে প্রচার করে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক কারাগারগুলোতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ মেলে। এবারের ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্তত চারটি রাজনৈতিক কারাগার এখনও চালু আছে। সেখানে বন্দিদের ওপর নির্যাতন, অপুষ্টি ও অমানবিক শ্রম চালু রয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর মতো গুরুতর। তবে এজন্য নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন, যেখানে চীন ও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আটকে দিচ্ছে।
জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার সরকারকে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ, রাজনৈতিক কারাগার বিলোপ এবং মানবাধিকার শিক্ষা চালুর আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে পরিবর্তন চায়। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা কেবল জনগণের স্বাধীনতাই কেড়ে নেয়নি, বরং বিনোদন ও তথ্যের মতো মৌলিক অধিকারকেও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধে পরিণত করেছে। বিদেশি সিনেমা বা টেলিভিশন নাটক দেখার দায়ে তরুণদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। খাদ্যাভাব, জোরপূর্বক শ্রম, রাজনৈতিক কারাগার ও অবিরাম নজরদারির মধ্যে এক প্রজন্ম ভয়ের রাজত্বে বন্দি হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেও চীন ও রাশিয়ার সমর্থনে কিম জং উনের শাসনযন্ত্র টিকে আছে আগের মতোই। ফলে উত্তর কোরিয়ার জনগণের মুক্তি ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এখনো অচলাবস্থার অন্ধকারেই আটকে আছে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)