নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট থেকে

বাংলাদেশে ন্যায়বিচার সংকট দূর করতে লিগ্যাল এইড আইনে বাধ্যতামূলক মামলা নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিলেটে লিগ্যাল এইড বিষয়ক একটি পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি সমস্যার একটি হলো ন্যায়বিচার সংকট। আমরা অতীতে যেসব আইন সংস্কার করেছি, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভবিষ্যত সরকার যদি এগুলো ধরে রাখে, তাহলে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ আরও বাড়বে।”

দ্রুত ও সাশ্রয়ী বিচার নিশ্চিতকরণ

ড. নজরুল জানান, লিগ্যাল এইড ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ বিরোধ নিষ্পত্তি প্রচলিত আদালতের তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ সময়ে সম্পন্ন হয়।
যেখানে আদালতে একটি মামলার রায় পেতে গড়ে পাঁচ বছর সময় লাগে, সেখানে লিগ্যাল এইড আদালতে তিন থেকে ছয় মাসেই নিষ্পত্তি সম্ভব। এ ছাড়া এ ব্যবস্থায় বিরোধ মীমাংসার পর ৯০ শতাংশ মানুষই সন্তুষ্ট থাকেন, ফলে নতুন করে মামলা করার প্রবণতা কমে আসে।

বাধ্যতামূলক লিগ্যাল এইডে মামলা

আইন সংস্কারের অংশ হিসেবে এখন থেকে ১১ ধরনের মামলায় সরাসরি আদালতে যাওয়ার আগে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে—

• পারিবারিক বিরোধ
• ভরণপোষণ
• সম্পত্তির ভাগ
• যৌতুক
• চেক জালিয়াতি
• বাড়িভাড়া সংক্রান্ত মামলা

বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো

লিগ্যাল এইড আদালতে মামলার জট এড়াতে প্রতিটি জেলায় বিচারকের সংখ্যা তিনজন করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবেন—

• একজন সিনিয়র সহকারী জজ
• একজন সিনিয়র জজ
• একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট

অতিরিক্ত আইন সংস্কার

ড. নজরুল আরও জানান—

• সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালত পৃথক করা হয়েছে।
• বিচারিক পদ সৃষ্টি এখন সরাসরি চিফ জাস্টিস অফিসের অধীনে।
• ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন করা হয়েছে যাতে সমালোচনার সুযোগ না থাকে।
• নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এইসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষ বিচার পাওয়ার অবারিত সুযোগ পাবেন।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মান অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব কর্পোরেশন জেনিস হোসাইন, জিআইজেড কান্ট্রি ডিরেক্টর মারটিনা বুকার্ড, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেখ আশফাকুর রহমানসহ সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী।