09/18/2025 গাজা গণহত্যার অভিযোগ : কাঠগড়ায় ইসরাইল
odhikarpatra
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৪
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করার পর দেশটি এবং এর নেতারা আন্তর্জাতিক আদালতে যদি কোন অভিযোগের মুখোমুখি হন এবং এরপর কী ঘটতে পারে?
দ্য হেগ ভিত্তিক দু’টি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসসি)। এই দুটি প্রায়শই মিশে যায়, এমনকি অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকরাও।
দ্য হেগ থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অপরাধ: যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা; সংঘটিত করার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিচার করে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত অনেক পুরনো আইসিজে সাধারণত এক দেশ অন্য দেশকে আন্তর্জাতিক চুক্তি ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত করলে সেসব দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের বিচার করে।
জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন (সিওআই) দেখেছে যে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’। কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই এএফপি’কে বলেছেন, এই কমিশন বিশ্ব সংস্থার পক্ষে কথা বলে না।
পিল্লাই বলেন, তার দল আইসিসি’র প্রসিকিউটরদের সাথে ‘হাজার হাজার তথ্য’ ভাগ করে নিয়েছে।
আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা বিশেষজ্ঞ থিজস বোউকনেগট বলেছেন, উভয় আন্তর্জাতিক আদালতই এই প্রতিবেদনটিকে বেশ কয়েকটি প্রমাণের মধ্যে একটি হিসাবে পরীক্ষা করবে।
তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি যদি একজন তদন্তকারী হতাম, তাহলে আমি প্রতিবেদনটি দেখতাম এবং এটিকে অন্যান্য অনেক উৎসের একটি হিসেবে ব্যবহার করতাম’।
কিন্তু বাউকনেগট বলেছেন, প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক পদক্ষেপের আহ্বানও ছিল।
তিনি বলেছেন, ‘একটি প্রতিবেদন কার্যকর হওয়ার জন্য এটির সাথে কিছু করার জন্য লোকের প্রয়োজন। এটি একটি রাজনৈতিক সংস্থা’।
‘প্রতিমন্ত্রী বা সরকারি নেতারা যদি মনে করেন যে, তারা গাজায় কিছু পরিবর্তন করতে চান, তাহলে প্রতিবেদনটি নিয়ে কিছু করার দায়িত্ব তাদের।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই গাজায় ইসরাইলের অভিযানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অনাহার, হত্যা এবং নিপীড়ন।
আইসিসি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনেনি।
আদালত তিনজন সিনিয়র হামাস নেতার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছে, যাদের সকলেই মৃত্যুর পর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে, সেখানে তারা ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
আইসিজে বিচারকরা ওই মামলায় বেশ কয়েকটি জরুরি রায় দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে রাফাহ গভর্নরেটে ইসরাইলের অভিযান বন্ধ করার এবং গাজায় ‘নিরবচ্ছিন্ন’ মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া।
কিন্তু আইসিজে এখনো গাজায় ইসরাইল গণহত্যা করছে কিনা তার বিস্তৃত মামলাটি বিবেচনা শুরু করেনি। অথচ এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক মাস বা বছর সময় লাগতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ক্ষেত্রে, এটি বর্তমানে তাদের এখতিয়ারের বিরুদ্ধে ইসরাইলি চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা করছে।
আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য তার ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে। যার অর্থ হল, যদি না ইসরাইল নেতানিয়াহুকে হেগের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার কাঠগড়ায় হাজির হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আইসিসি কারো অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করতে পারে না।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার জবাবে একটি তথাকথিত ‘পাল্টা স্মারক’ লিখিতভাবে দাখিল করার জন্য ইসরাইলকে ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে।
এরপর, আদালত উভয় পক্ষের সম্ভাব্য আপত্তি বিবেচনা করার সাথে সাথে লিখিতভাবে আরো আইনি আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুধুমাত্র তখনই বিচারকরা মামলার ‘যোগ্যতা’ যাচাই করেন, যার মধ্যে মৌখিক শুনানি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এতে অনেক দিন সময় লাগে। আইসিসিতে পরবর্তী দেখার বিষয় হল এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের জন্য কোনো সময়সীমা নেই।
আইসিজেতে, বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক ২০২৭ সালের আগে গণহত্যার শুনানি খুব বেশি আশা করেন না।
বোউকনেগট বলেছেন, ‘আপনি জানেন যে, আইনটি অবিশ্বাস্যভাবে ধীর গতি সম্পন্ন্। তাই এটি পাঁচ বছর বা দশ বছর পরে কার্যকর বা কার্যকর হলেও হতে পারে’।
বাসস