09/24/2025 ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করল পশ্চিম তীরের জর্ডান সংযোগকারী কিং হুসেইন ব্রিজ
odhikarpatra
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৯
প্যালেস্টাইনের সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েল কিং হুসেইন ব্রিজ (অ্যালেনবি ব্রিজ) স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এই ব্রিজটি পশ্চিম তীর এবং জর্ডানকে সংযুক্ত করে, এবং প্যালেস্টাইনের জন্য এটি একমাত্র আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ। বন্ধের ফলে পণ্য ও মানুষ দু’ই যাতায়াত করতে পারবে না।
প্যালেস্টাইনের বর্ডার ও ক্রসিংস জেনারেল অথরিটি মঙ্গলবার জানিয়েছে, বুধবার থেকে ব্রিজ বন্ধ থাকবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থিতি চলবে। একইসাথে জর্ডানের পাবলিক সিকিউরিটি ডিরেক্টরেটও ঘোষণা করেছে, “ব্রিজটি যাত্রী ও কার্গো উভয় ধরনের ট্রাফিকের জন্য বন্ধ থাকবে।”
ব্রিজটি মূলত পশ্চিম তীর থেকে বাইরের দেশসমূহে যাত্রা করতে চাওয়া প্যালেস্টিনিদের একমাত্র নিরাপদ পথ। সম্প্রতি এটি সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল একটি হত্যাকাণ্ডের কারণে। এক জর্ডানীয় নাগরিক হিউম্যানিটারিয়ান এইড ট্রাকে করে ব্রিজে প্রবেশ করার সময় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গুলি চালিয়ে দুইজন সৈন্যকে হত্যা করে। হামাসের সশস্ত্র বাহিনী কাসসাম ব্রিগেডস এই ঘটনার দায় স্বীকার করে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সাহুত জানান, “ইসরায়েল কেন সম্পূর্ণভাবে সীমান্ত বন্ধ করেছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি মিডিয়ার কিছু অংশ এটি দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির প্রথম পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।”
ফিলিস্তিনের করামা এলাকায় অবস্থিত এই ক্রসিংটি এমন একটি আন্তর্জাতিক প্রবেশপথ, যেখানে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের সরাসরি প্যালেস্টাইনের বাইরে যাত্রা করতে হয়, যা ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন হয় না। ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিজ বন্ধ করা শুধু নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের প্রতিক্রিয়াও বটে। বিশ্বজুড়ে ১৫০টিরও বেশি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর এই স্বীকৃতি ইসরায়েলের সরকারের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মানবিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কিং হুসেইন ব্রিজ বন্ধ হওয়ায় প্যালেস্টিনিদের জীবনে চরম অসুবিধা সৃষ্টি হবে। ব্রিজটি মূলত ত্রাণ সরবরাহ, ওষুধ, এবং ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনের একমাত্র পথ। সুতরাং ব্রিজ বন্ধ থাকায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান ব্যাহত হবে।
এছাড়া, প্যালেস্টিনিরা যেসব দেশে শিক্ষার বা কাজের জন্য যাতায়াত করে থাকেন, তারা নতুন করে অন্য পথ খুঁজতে বাধ্য হবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়ও বটে।
”বিশ্লেষণ: প্রতিক্রিয়া এবং কূটনৈতিক সমীকরণ
ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ব্রিজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের প্রথম ‘কাউন্টারমেজার’ হতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি রাজনৈতিক সংকেত, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর ফিলিস্তিন স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে।
জর্ডান থেকেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মানবিক মান বজায় রাখতে চেষ্টা করবে। তবে স্থানীয় ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া, ইসরায়েলি পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। এখনও এই স্বীকৃতিগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে কিনা তা সন্দেহজনক।
প্যালেস্টিনির জন্য একমাত্র আন্তর্জাতিক পথ
পশ্চিম তীরের মানুষদের জন্য কিং হুসেইন ব্রিজ ছিল একমাত্র আন্তর্জাতিক সংযোগ, যা ছাড়া তারা অন্য দেশে যাত্রা করতে পারবে না। ব্রিজটি বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারণেই নয়, এটি রাজনৈতিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রতিক্রিয়াও বটে।
”আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, ব্রিজ দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখলে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো বলছে, “প্যালেস্টিনিদের নিরাপদ যাতায়াতের অধিকার রক্ষা করা আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।”
সংক্ষেপে: