11/27/2025 মেগাসিটির দৌড়ে ঢাকা দ্বিতীয়: জাতিসংঘ বলছে ২০৫০ সালে বিশ্বের শীর্ষ শহর হতে পারে রাজধানী
Special Correspondent
২৬ November ২০২৫ ২৩:০০
নিউজ ডেস্ক │অধিকারপত্র
জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশর রাজধানী ঢাকা। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের (ইউএন–ডিইএসএ) সর্বশেষ সমীক্ষা ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫ এতে উঠে এসেছে এ চিত্র। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। যার বর্তমান জনসংখ্যা ৪ কোটি ১৯ লাখ। আর ঢাকা ৩ কোটি ৬৬ লাখ বাসিন্দা নিয়ে অতিক্রম করেছে দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা জাপানের রাজধানী টোকিওকে। ২০০০ সালের সমীক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর ছিল টোকিও। তবে এবার ৩ কোটি ৩৪ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে শহরটি নেমে গেছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে, আগের তালিকায় নবম অবস্থানে থাকা ঢাকা এক লাফে উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস বলছে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকা হয়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর। গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের প্রবাহ, কর্মসংস্থানের খোঁজে রাজধানীতে যাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল এসবকে ঢাকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শহর জাকার্তা। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমি ধসে যাওয়া এ দুইয়ে শহরটির অন্তত এক-চতুর্থাংশ ২০৫০ সালের মধ্যে পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এ ঝুঁকি মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়া সরকার বোর্নিও দ্বীপে নুসানতারা নামে নতুন রাজধানী গড়ে তুলছে। তবুও ২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তায় আরও এক কোটি মানুষের বসতি স্থাপনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয় বিশ্বের মেগাসিটির (অন্তত ১ কোটি বাসিন্দার শহর) সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩টিতে। যা ১৯৭৫ সালের তুলনায় চারগুণেরও বেশি। এর মধ্যে ১৯টি এশিয়ায় অবস্থিত। শীর্ষ ১০ মেগাসিটির ৯টিই এশিয়ার। এই তালিকায় রয়েছে—
ভারতের নয়াদিল্লি- ৩ কোটি ২ লাখ
চীনের সাংহাই- ২ কোটি ৯৬ লাখ
গুয়াংজু- ২ কোটি ৭৬ লাখ
ফিলিপাইনের ম্যানিলা- ২ কোটি ৪৭ লাখ
ভারতের কলকাতা- ২ কোটি ২৫ লাখ
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল- ২ কোটি ২৫ লাখ
এশিয়ার বাইরে শীর্ষ ১০-এ একমাত্র শহর মিশরের রাজধানী কায়রো যার জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ। আমেরিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় শহর ব্রাজিলের সাও পাওলো (১ কোটি ৮৯ লাখ) এবং আফ্রিকায় বৃহত্তম শহর নাইজেরিয়ার লাগোস দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নগরায়ণের নতুন সংজ্ঞায় এই সমীক্ষায় জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নগরায়ণের নতুন মাপকাঠি ব্যবহার করেছে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি শহর হবে পরস্পর সংলগ্ন জনবসতি। যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ১,৫০০ জন বাস করবে এবং মোট জনসংখ্যা হবে অন্তত ৫০,০০০। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণগুলো বলা হয়েছে: গ্রাম থেকে কর্মসংস্থানের খোঁজে শহরমুখী মানুষের ঢল। জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসের অনিশ্চয়তা। বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাস্তুচ্যুতি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কর্মসংস্থানের কেন্দ্রীকরণ। জাতিসংঘের এই সমীক্ষা বলছে ঢাকার দ্রুত বিস্তার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বৈশ্বিক নগরায়ণ প্রবণতার একটি বড় সূচক। তবে অবকাঠামো, পরিবেশ, জনসেবা ও পরিকল্পনার যথাযথ সমন্বয় না হলে ভবিষ্যতে এই বৃদ্ধি হতে পারে বড় চ্যালেঞ্জের কারণ। তবুও আগামী কয়েক দশক ঢাকাই হয়ে উঠতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগাসিটি এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে জাতিসংঘ।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র