12/01/2025 বিশ্বজুড়ে চলছে যুদ্ধ, অস্ত্র উৎপাদকদের আয়ে রেকর্ড উল্লম্ফন
odhikarpatra
১ December ২০২৫ ১৪:৪৮
অধিকারপত্র.কম
ঢাকা:
বিশ্বজুড়ে সামরিক উত্তেজনা ও বড় ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় থাকার ফলে অস্ত্র উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর আয় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (SIPRI) প্রকাশিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার অস্ত্র বিক্রি থেকে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৬৭৯ বিলিয়ন ডলারে। যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৯ শতাংশ বেশি।
সিপ্রি (SIPRI)-এর এই প্রতিবেদন স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে যে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় চলমান যুদ্ধসহ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় বৃদ্ধিতে এবং অস্ত্র শিল্পের মুনাফা বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
আয় বৃদ্ধির মূল চালক:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ আয়ের সিংহভাগই এসেছে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো থেকে।
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ: শীর্ষ ১০০ অস্ত্র কোম্পানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি কোম্পানি ৩.৮ শতাংশ সম্মিলিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে মোট ৩৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ইউরোপের কোম্পানিগুলো (রাশিয়া বাদে) সম্মিলিতভাবে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ১৫১ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে।
যুদ্ধ-নির্ভর প্রবৃদ্ধি: ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য কামানের গোলা সরবরাহ করে চেক কোম্পানি 'চেকোস্লোভাক গ্রুপ' ১৯৩ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা শীর্ষ ১০০ কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার দুটি প্রধান অস্ত্র কোম্পানিও তাদের আয় ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েল: ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের নয়টি কোম্পানি শীর্ষ ১০০-তে জায়গা করে নিয়েছে। গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের তিনটি অস্ত্র কোম্পানির সম্মিলিত আয়ও ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে 'রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস'-এর মতো সংস্থাগুলোর ড্রোন ও কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেমের চাহিদা আন্তর্জাতিকভাবে অভূতপূর্বভাবে বেড়েছে।
এশিয়ার মিশ্র চিত্র:
এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের চিত্র ছিল মিশ্র। সামগ্রিকভাবে ১.২ শতাংশ হ্রাস পেলেও এর জন্য মূলত চীনের অস্ত্র কোম্পানিগুলোর ১০ শতাংশ সম্মিলিত আয় হ্রাস দায়ী। চীনা সংস্থা, বিশেষ করে NORINCO-এর বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশটির অস্ত্র সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ এবং চুক্তি বাতিল হওয়াকে চিহ্নিত করেছে সিপ্রি।
তবে, তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মাঝে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের বিক্রি আকাশ ছুঁয়েছে। জাপানি কোম্পানিগুলোর আয় ৪০ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরীয় সংস্থাগুলোর আয় ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন খেলোয়াড় ও চ্যালেঞ্জ:
এই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স (SpaceX), যাদের সামরিক বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে ১.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা বায়ক (Baykar) তাদের মোট সামরিক আয়ের ৯৫ শতাংশই রপ্তানি থেকে লাভ করেছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কোম্পানিগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে বাজেট-বহির্ভূত ব্যয় এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্বের মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া, চীন সমালোচনামূলক খনিজগুলির উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করায় ইউরোপীয় সংস্থাগুলি কাঁচামাল সংগ্রহে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।