12/04/2025 পাবনায় ৮ কুকুরছানা হত্যা: সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী কারাগারে প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ নিয়ে নতুন প্রশ্ন
Special Correspondent
৩ December ২০২৫ ১৯:৩৫
নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি সদ্যোজাত কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের ঝড় তুলেছে এবং দেশে প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর প্রয়োগযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত রোববার (১ ডিসেম্বর) রাতের কোনো এক সময় উপজেলা পরিষদের পুকুরে জীবন্ত অবস্থায় আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে ফেলে দেন নিশি রহমান। এমন অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মা কুকুরের অবিরাম চিৎকারে এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে ছানাগুলোর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। বৃহত্তর জনরোষ ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। পরে রাতেই পুলিশ নিশিকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে তাকে পাবনা আমলি আদালত-২ এ সোপর্দ করা হলে বিচারক তরিকুল ইসলাম কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে নিশি রহমান কুকুরের চিৎকারে বিরক্ত হয়ে ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরপাড়ে রাখার কথা স্বীকার করলেও, পুকুরে ফেলার দায় অস্বীকার করেছেন।
এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সোমবারই অভিযুক্ত নারীর স্বামী, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে গেজেটেড সরকারি কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার বিকেলে নির্দেশ অনুযায়ী তারা কোয়ার্টার খালি করেন। প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ অনুযায়ী প্রথমবার কোনো প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রমাণিত হলে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সাজা বেড়ে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সুযোগ রয়েছে। তবে এই আইনের বড় সীমাবদ্ধতা হলো বিচার শুরু করতে হলে কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ আবশ্যক। এখানে কর্তৃপক্ষ বলতে কেবল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার অনুমোদিত ভেটেরিনারি সার্জনকে বোঝানো হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বা প্রাণী অধিকারকর্মীরা সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারেন না। আইনজীবীরা মনে করেন, এই বিধান বিচার প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ দমনেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ঈশ্বরদীর ঘটনাটি আলোচনায় এসেছে ও আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয়েছে মূলত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সক্রিয়তার কারণে। কিন্তু দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এমন ঘটনার বিচার পাওয়া কতটা সহজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রাণী অধিকার কর্মীরা। পাবনায় আটটি কুকুরছানা হত্যার এই ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় অপরাধ হিসেবে সীমাবদ্ধ নয় এটি দেশের প্রাণী কল্যাণ ব্যবস্থা, আইনের প্রয়োগযোগ্যতা এবং জনসচেতনতার ঘাটতিকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও বাস্তবে বিচার পেতে কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা জরুরি যা সব অঞ্চলে সমানভাবে নিশ্চিত হয় না। এই মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ভবিষ্যতে এমন নিষ্ঠুরতা রোধে আইন সংশোধন, কঠোর প্রয়োগ এবং সামাজিক পর্যায়ে মানবিক মূল্যবোধ গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। সমাজের মানুষ, প্রশাসন এবং আইন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল প্রাণী নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কুকুরছানা হত্যার ঘটনাটি শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, পুরো দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ আরও কার্যকর ও নাগরিক-বান্ধবভাবে প্রয়োগের দাবি আবারও জোরালো হয়েছে।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র