12/07/2025 উৎসবের গাছ, প্রকৃতির লাভ: ক্রিসমাস ট্রির অজানা উপকারিতা
Special Correspondent
৬ December ২০২৫ ২৩:১৭
নিউজ ডেস্ক | অধিকারপত্র
বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষকেও ভাবাচ্ছে উৎসবের সময়ে ব্যবহৃত সামগ্রীগুলোর পরিবেশগত প্রভাব। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে ক্রিসমাস ট্রি রিয়েল নাকি প্লাস্টিক কোনটি পরিবেশবান্ধব? বিজ্ঞানীরা বলছেন বিষয়টি এত সরল নয়। ক্রিসমাস ট্রির পরিবেশগত প্রভাব কেবল কাটা গাছ বনাম প্লাস্টিক এই দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি ভূমি-ব্যবহার, কার্বন-চক্র, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। দুই শতকের পুরোনো ঐতিহ্য, নতুন যুগের পরিবেশ-চিন্তায় জানা যায় ইংল্যান্ডে ১৮০০ সালে রানি শার্লট প্রথম ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রচলন করেন। এরপর জার্মান অভিবাসীদের হাত ধরে এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপজুড়ে ও যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই বছরে বিক্রি হয় প্রায় ২.৫–৩ কোটি রিয়েল ক্রিসমাস ট্রি। ২০১৯ সালের এক জরিপ বলছে তরুণ প্রজন্ম (মিলেনিয়ালস) আগের তুলনায় বেশি হারে রিয়েল ট্রির দিকে ঝুঁকছে। গাছ কাটা মানেই খারাপ এই মিথ ভাঙছে গবেষক ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বন পরিবেশবিদ আলেকজান্দ্রা কোসিবা, উৎসবের আগে যে গাছ কাটা হয় সে গাছটি প্রায় ১০ বছর ধরে বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ একটি গাছ কাটার সময় অন্তত আরও নয়টি গাছ জমিতে দাঁড়িয়ে থাকে এটাই ক্রিসমাস ট্রি উৎপাদনের কাঠামো। এভাবে ট্রি ফার্মগুলো স্থানীয় আয়ের উৎস, গ্রামীণ দৃশ্যপট সংরক্ষণ এবং জমি উন্নয়ন থেকে রক্ষা সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যদিও ক্রিসমাস ট্রি অল্প সময়ের জন্য চাষ করা হয়। এগুলো অনেক এলাকায় পাখি ও পোকামাকড়ের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। জার্মানিতে ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কৃষি-নির্ভর এলাকায় কমে যাওয়া হলদে-চড়াই (yellowhammer) ও common linnet-এর মতো পাখিদের জন্য এসব বাগান নিরাপদ আবাস। ২০১৯ সালে বেলজিয়ামের এক গবেষণায় দেখা যায়, ভুট্টার ক্ষেতের তুলনায় ক্রিসমাস ট্রি বাগানে বিটল প্রজাতির বৈচিত্র্য অনেক বেশি।
গবেষকরা মনে করেন যেখানে কৃষিজমি অত্যধিক যান্ত্রিক হয়েছে, সেখানে ক্রিসমাস ট্রি বাগান হচ্ছে একটি ছোট ইকো ওয়েসিস। যে জমি ক্রিসমাস ট্রি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, অনেকটাই শহরতলির কাছাকাছি। এসব জমি বাণিজ্যিক এলাকা, পার্কিং লট বা ভবনে রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় ট্রি ফার্ম জমিকে সবুজ অবস্থায় ধরে রাখে। কার্বন প্রভাব—কাটার পরও গণনা থেমে যায় না একটি ২ মিটার উচ্চতার গাছ যদি চিপ করে পুনঃব্যবহার করা হয় → ৩.৫ কেজি CO₂e একই গাছ যদি ল্যান্ডফিলে ফেলা হয় → ১৬ কেজি CO₂e। সবচেয়ে খারাপ প্রভাব ঘটে ল্যান্ডফিলে ফেলা হলে, কারণ সেখানে গাছ পচে মিথেন তৈরি করে—যা ২০ বছরের স্কেলে CO₂–এর চাইতে ৮০ গুণ শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাস। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে পুরোনো ট্রিগুলো নদী ও হ্রদের পাশে ফেলে ক্ষয় রোধ, মাছের আবাস তৈরি ও প্রাকৃতিক বাধা নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোসিবা বলেন এগুলো একপ্রকার মানুষের বানানো বিভার ড্যাম এর মতো কাজ করে। প্লাস্টিক ট্রির কার্বন নিঃসরণ সাধারণত রিয়েল ট্রির তুলনায় ৭–২০ গুণ বেশি। তবে একটি কৃত্রিম গাছ যদি ১০–১২ বছর ধরে ব্যবহার করা যায়, তখন পরিবেশগত ব্যালান্স কিছুটা সমান হয়ে আসে। সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্পগুলো হলো, পট-গ্রোন ট্রি → বছর বছর ব্যবহার। পরে বাগানে লাগানো যায় ক্রিসমাস ট্রি রেন্টাল সার্ভিস → ব্যবহার শেষে গাছ আবার নার্সারিতে ফিরে যায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গাছ কেনা → পরিবহন নিঃসরণ কম। ক্রিসমাস ট্রির পরিবেশগত প্রভাব ছোট তবে এটি আমাদের ভূমি-ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বড় প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে সাহায্য করে। গাছ কাটা নয়, বরং গাছের চাষ, ব্যবস্থাপনা ও পুনঃব্যবহারই আসল বিবেচ্য বিষয়।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র