12/13/2025 শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ; জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বহিষ্কার দাবি
odhikarpatra
১২ December ২০২৫ ২২:২৮
কুবি প্রতিনিধি :
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদির উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তাল হয়ে ওঠে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আয়োজিত এই তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা হাদি ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচার এবং বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বহিষ্কারের দাবিতে সোচ্চার হন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন
শরীফ ওসমান বিন হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কুবির শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন।
স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত ক্যাম্পাস
সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা 'হাদি ভাই গুলিবদ্ধ, ইন্টেরিম জবাব দে', 'লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই', 'ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ', 'দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ', 'রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়', 'দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'তুমি কে আমি কে, হাদী হাদী' এবং 'ভারতীয় আদিপত্য, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
'জুলাই যোদ্ধাদের শেষ করে দিতে চায় সরকার'
বিক্ষোভকালে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফ ভুঁইয়া বলেন, "জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা বারবার বলেছিলাম আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে। গত ১৭ বছর তারা শুধু ক্ষমতা বিস্তার করেনি, তারা তাদের অস্ত্রভান্ডারও সমৃদ্ধ করেছে। আমরা দেখছি বাংলাদেশে হাদী ভাইয়েরা অনিরাপদ; সে বাংলাদেশে আমি আপনিও নিরাপদ নই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, হাদী ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা জানি তারা কী চায়, তারা চায় জুলাই যোদ্ধাদের শেষ করে দিতে, তারা চায় বাংলাদেশ থেকে জুলাইকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে।"
'ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার হাদি ভাই'
ইনকিলাব মঞ্চ কুবি শাখার আহ্বায়ক হান্নান রহিম এই হামলার পেছনে ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, "হাদী ভাই জুলাইয়ের অন্যতম যোদ্ধা। তিনি সবসময় ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমরা দেখেছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।"
তিনি হামলাকারীকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার তীব্র সমালোচনা করেন। হান্নান রহিম বলেন, "আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তরকারিতে আলু চেক করেন এমন অচল মাল দিয়ে দেশ চলতে পারে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করতে হবে। সর্বোপরি নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।"
'আবার বদ্ধ শিকলে ফিরতে হবে আমাদের'
কুবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক আবির বলেন, "২৪ জুলাইয়ের রক্তঝরা আন্দোলনে আমরা যে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম, স্বাধীনতার পর আবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন এটাই প্রমাণ করে আমরা এখনও নিরাপদ নই।"
তিনি আরও বলেন, "বুয়েটের আবরার ফাহাদ যখন সত্য উচ্চারণ করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের হাদি ভাই যখন জুলাইয়ের চেতনাকে ধরে রেখে দুর্নীতি, ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকেও একই কায়দায় সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনই যদি সতর্ক না হই, তবে খুব শিগগিরই আবার বদ্ধ শিকলে ফিরতে হবে আমাদের।"
শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর এই হামলার ঘটনা নির্বাচনী পরিবেশ এবং জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শাহরিয়ার হোসেন জুবায়ের
কুবি প্রতিনিধি