বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘গত কিছুদিন থেকে পত্রপত্রিকায় আরপিও-তে পরিবর্তন নিয়ে সংবাদ দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা কিংবা আলোচনার জন্য এসেছিলাম। এছাড়া, নির্বাচন আচরণ বিধি নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘ইসিকে আমরা বলেছি— এ আচরণ বিধি যাতে এমন হয়ে না দাঁড়ায় যে, নির্বাচনে বাঁধার সৃষ্টি করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংশোধন দরকার, সেটুকুই যেন করেন। সবার জন্য সমান যেন থাকে সেটাই যেন করেন।’
তিনি বলেন, ‘যেসব সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে সেখানকার এমপিরা আচরণ বিধির কারণে সেখানে যেতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তারা সেখানে বসবাস করেন। এমপিদের ওপর যদি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, তাহলে সরকারি কার্যক্রম অচল হয়ে যাবে। বাস্তবসম্মত সংশোধনী যেন হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
এইচটি ইমাম আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের গতিবিধি ও চলাফেরায় যেন বাধ্যবাধকতা না থাকে। তারা যেন স্বাভাবিক রাজনীতি ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।’ ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারি খরচে প্রচারণা করেন। তাদের চেয়ে আমরা স্মার্ট হলে সমস্যা কোথায়।’
সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনি সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে কমিশন যে প্রস্তাব করেছে, তার মধ্যে অনেক আসনে কমিশনের গাইডলাইন মানা হয়নি। অনেক জায়গায় জনগণের আপত্তি আছে। কয়েকদিন পর এসব বিষয় নিয়ে শুনানি হবে। তার আগেই কয়েকটি বিষয় কমিশনকে বলেছি।’
খসড়া সীমানার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আসনে জনসংখ্যা অনেক বেশি। কোনও কোনও জায়গায় নির্বাচনি এলাকা ছিল, সেই নির্বাচনি এলাকাটি নেই। নতুন এলাকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমান আইন অনুযায়ী এই কাজটি নির্বাচন কমিশন করতে পারে না।’ কতটি আসনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন, তা পরিষ্কার করেনি তিনি। শুনানিতে বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান এইচ টি ইমাম।
ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপে সীমানা নির্ধারণ এবং আইন ও বিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না আনার জন্য প্রস্তাব করেছিল আওয়ামী লীগ- এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘ইসির সঙ্গে সেই কথাটি পুনর্ব্যক্ত করলাম। সেটিই বলেছি। আমরা বলেছি, বর্তমান আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কোনও বড় পরিবর্তন করতে পারে না। আগামী আদম শুমারির পর সীমানায় বড় পরিবর্তন করতে পারে। আগেও বলেছি এখনও বলছি, ২০১১ সালে আদম শুমারি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সীমানা পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এই সময়ে বড় পরিবর্তনের এখতিয়ার ইসির নেই। এখন বড় পরিবর্তন করলে সংক্ষুব্ধরা হাইকোর্টে চলে যাবেন। সীমানা পুনর্নির্ধারণে বেশ কটি অযৌক্তিকতা রয়েছে, তাদের গাইডলাইন পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি।’ এ সময় নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের অবদানও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভোট চাওয়ার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই পরবর্তী নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন দলনেতা। অন্য দলনেতারা ভোট চাইছেন, আমরা কাউকে বলিনি ভোট চাইতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরে সুস্পষ্ট বিভাজন আছে। তিনি সরকারি কার্যক্রম ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ভিন্নভাবে আলোচনা করেন। পরে তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। দলের প্রধান হিসেবে ভাষণ দেন। ওই অংশটুকু পুরোটাই দলীয়, সেখানে সরকারের সম্পৃক্ততা থাকে না। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যান না। মঞ্চ নির্মাণসহ সব খরচ দলীয়ভাবে বহন করা হয়। স্বাভাবিকভাবে নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেবেই।’
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল কমিশন সচিবালয় ছেড়ে যাওয়ার পর বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল তিনটি বিষয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আচরণ বিধিমালায় সংসদ সদস্যরা অংশ নিতে পারেন না। সে বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন। চলমান সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কে উনারা কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। একইসঙ্গে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের কিছু প্রস্তাবনা আছে। কমিশনাররা তাদের বক্তব্য শুনেছেন। তাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান, আইন-কানুন অনুসরণ করে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করবেন, দেখবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আরপিও-তে গ্রহণযোগ্য সংশোধন যেন করা হয় সেই প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জবাবে কমিশন বলেছে, আমাদের প্রস্তাবনা সংসদে পাঠাবো। ওই প্রস্তাব বিবেচনা করবে কিনা, তা সংসদের বিষয়।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল আমাদের বলেছেন, এমপিরা সরকারি গাড়ি-বাড়িসহ মন্ত্রীদের মতো সুবিধা ভোগ করেন। যেহেতু সরকারি সুবিধা ভোগ করেন না, তাই সম্ভব হলে এমপিদের প্রচার-প্রচারণার সুযোগ দিতে আচরণ বিধিতে সংশোধনী আনা যায় কিনা? এ বক্তব্যের জবাবে সিইসি বলেছেন, ‘এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কমিশন সভায় আইন-কানুন ও সংবিধান বিবেচনা করে প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো।’ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা নিয়ে উনারা কোনও বক্তব্য দেননি। বর্তমান আচরণ বিধি মেনেই চলবেন বলে জানিয়েছেন।’