সাধারণ যাত্রীরা সচেতন হলে ড্রাইভার-হেল্পাররা আইন ভাঙবে না’—নূর হোসেন নয়
, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গত কিছুদিন ধরেই দেশে যে চমত্কার ‘আঠারোর বিপ্লব’ ঘটছে তা দুজন ছাত্র-ছাত্রী নিহতের কারণে—এমনটা ভাবলে ভুল হবে। সড়কখাতের তীব্র অনিয়ম আর রাজধানীতে গণপরিবহনের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই এই আন্দোলন রসদ পেয়েছে। ট্রাফিক খাতে দুর্নীতি, বিআরটিএর অদক্ষতা আর সাধারণ মানুষদের আইনের প্রতি অবহেলা আমাদের রাস্তাগুলোকে স্থবির করেছে। তার উপর প্রশাসন ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ট্রাফিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়েই দাঁড়িয়েছে। এসব কিছুর বিরুদ্ধেই স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিশু-কিশোর-কিশোরীদের এই আন্দোলন।
শিক্ষার্থীরা একটা সুন্দর সিস্টেমের দাবি করছে। একটা সুন্দর সিস্টেম একদিনে আনা যাবে না, হয়তো এক মাসেও না; কিন্তু সবাই মিলে চাইলে অবশ্যই শুরু করা যাবে। পরিবহন খাতের পেশাজীবীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণের মাধ্যমে অসুস্থ প্রতিযোগিতার লাগাম টানতে হবে। ঢাকার রাস্তার প্রায় পুরোটাই দখল করে রাখে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো, যদিও এর যাত্রী মোট যাত্রীর মাত্র ৪ শতাংশ। তাই যদি ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির রাশ টানা যায় এবং জনগণকে গণপরিবহন ব্যবহারে উত্সাহিত করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে রাস্তার ভোগান্তি কমে যাবে। বিআরটিসিকে শক্তিশালী করে, মানসম্পন্ন পাবলিক বাস চালু করে মানুষের নির্ঝঞ্ঝাট চলাফেরা নিশ্চিত করা যায়। জনপ্রতিনিধিদেরকে যদি সাধারণ মানুষের সাথে গণপরিবহনের যাতায়াত করতে বাধ্য করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা জনগণের কষ্টটুকু বুঝবেন। ট্রাফিক পুলিশদের সকল প্রভাবের বাইরে থেকে কাজ করার স্বাধীনতা দিলে আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে।
তবে সবার আগে দরকার সবার সচেতনতা, সাধারণ যাত্রীরা যদি সচেতন হই, নিজেরা ট্রাফিক আইন না ভাঙি তাহলে আমাদের সামনে ড্রাইভার বা হেল্পাররাও আইন ভাঙতে সাহস পাবে না। আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ আর বয়কট তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য করবে।