04/21/2025 মহাজোটে যুক্তফ্রন্টের যোগদানের কারণ
Mahbubur Rohman Polash
১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৪৮
স্টাফ রিপোর্টার: গত দুই মাসের রাজনৈতিক পটপরিক্রমা বিশ্লেষণ করে এটি বুঝতে কারো সময় লাগবে না যে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে এ কথাটি শতভাগ সত্যি। তা না হলে কি করে সম্ভব যারা গোটা জীবন ভর আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতি করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে নেতা মেনেছেন; তারা এখন ভিড়েছেন বিপরীত আদর্শ ও মেরুর দল বিএনপির সঙ্গে।
আবার যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, তারাও কিনা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন। অথচ তারা রাজনৈতিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বিএনপির সঙ্গে জড়িত ছিল।
বলা হচ্ছে- নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সম্পর্কে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষ নেতা ড. কামাল হোসেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্নারা এবার নির্বাচন করবেন ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে।
অপরদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও জাতীয় যুক্তফ্রন্টের এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মেজর (অব.) মান্নান, শমসের মবিন চৌধুরী, জেবেল রহমান গাণিরা ভিড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। এ জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন তারা। এদের প্রত্যেকেই এক সময় বিএনপি কিংবা বিএনপি ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এতদিন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপরীতে অবস্থান নিলেও এখন তাদের সঙ্গে কেন জোট বাঁধতে চাইছে যুক্তফ্রন্ট?
এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, আমরা সবসময় বলেছি- আমরা বিরুদ্ধবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে...। বিকল্পধারা তো জন্মের পর থেকে কখনই বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারো বিরুদ্ধে রাজনীতি করেনি।
তিনি বলেন, আমরা তো একসময় বিএনপি থেকে বেরিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। পরে সেই বিএনপির সঙ্গে তো আমরা এতদিন আলোচনা করেছি যে আমাদের নীতির ওপর ভিত্তি করে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা যায় কিনা। সেটি হয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের চেষ্টা থেকে সরে যাইনি।
রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
এছাড়া দেশ বিরোধী শক্তিকে রুখে দেয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং গণতন্ত্রবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহাজোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহী বি চৌধুরী।
এর আগে, ১৪ দলের সাথে জোটগতভাবে নির্বাচন করা অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন, বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি ধৌধুরী।
গত মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটি জানান।
১৪ দলের সঙ্গে দলগত ভাবে নির্বাচনে আসছেন কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে মাহি বি চৌধুরী বলেন, আমরা নির্বাচনে আসছি এটা নিশ্চিত। জোটগত নির্বাচন অসম্ভব নয়, এটা অসম্ভব নয়। এটুকুও বলবো। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে বিষয়গুলো অবশ্য এর বেশি খুলে বলা যাবে না। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করেছি। এবং খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবো আমরা যুক্তফ্রন্ট এবং চৌদ্দ দল। এই সমস্ত বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা যাতে শুরু হয়, তার প্রক্রিয়া আজকে থেকে শুরু।
আপনারা কিছুদিন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সাথে ছিলেন। কোন একটা ঝামেলা হওয়াতে বের হয়ে আসছেন। আপনারা আওয়ামী লীগ বিরোধীও ছিলেন। কি কারণে আপনারা চৌদ্দ দলের সাথে যুক্ত হচ্ছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহি বলেন, বিকল্পধারা জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও রাজনীতি করেনি, বিএনপির বিরুদ্ধেও রাজনীতি করেনি। আমরা বাংলাদেশের পক্ষে রাজনীতি করেছি। বিএনপির সাথে একসাথে বসেছিলাম, আলোচনা করেছিলাম। আমরা মন থেকে আশা করেছিলাম জিয়াউর রহমানের দল হিসেবে তারা জামায়াতকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারবে। তাদের সাথে জামায়াতের যে আত্নার সস্পর্ক তৈরি হয়েছে সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে নি, সেটা তাদের জন্য দুঃখজনক, বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক।
ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে আমরা একটা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছি। গত বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের দলের মহাসচিব মান্নান সাহেবের সাথে ওবায়দুল কাদের সাহেবের বেশ কয়েক বার আলাপ হয়েছে। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে আজকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে শক্তি ষড়যন্ত্র করছে, সেই সমস্ত বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দেশ প্রেমিক একসাথে করে একটি সুন্দর নির্বাচন যাতে করে করা যায়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যায়, বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ যাতে বিজয় অর্জন করতে পারে, সার্বিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৪ দলে আসবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা চৌদ্দ দলে আসছি না, আমরা মহাজোটের বিষয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে মাহী বলেন, যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী জোটের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে যেতে পারে। এর ব্যাখ্যায় বলেন, সাংবিধানিক এ সরকার যেন হঠাৎ হোঁচট না খায়, এজন্য আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।
মাহী বলেন, মহাজোট সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নিজেদের দাবি আদায়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের যে দুটি প্রধান দল তাদের মাঝামাঝি থেকেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছি আমরা।
মহাজোট সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যদি শরিকদের একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তা হলে এতে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে বলে তিনি মনে করেন।
ঐক্যফ্রন্টের সামনে যুক্তফ্রন্ট যে দাবি ও লক্ষ্যগুলো রেখেছিল, এবার সেই একই বিষয় নিয়ে মহাজোটের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করার কথা জানান মাহী বি চৌধুরী।
মহাজোটের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখার কথা জানান তিনি। সেগুলো হল-
১. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অক্ষুণ্ণ রাখা।
২. সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখা।
৩. স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা।
মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই আসন নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে যুক্তফ্রন্ট।
পাশাপাশি মহাজোটের সঙ্গে এই জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বিফলে যাবে, এমনটি এখনই ভাবতে চান না মাহী বি চৌধুরী।
তিনি বলেন, যখন আমরা কোনো কাজ শুরু করি, তখন তো অকৃতকার্য হওয়ার মানসিকতা নিয়ে শুরু করি না। আমরা এখন পর্যন্ত আশাবাদী বলেই মহাজোট গঠনের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তফ্রন্ট এতদিন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১৩ অক্টোবর বি চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়। এরপর দল ভেঙে একটি অংশ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল থেকে বেরিয়ে যায় তিনটি দলের একাংশ। তারাসহ চারটি দল বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়।
এগুলো হলো- জেবেল রহমান গাণির বাংলাদেশ ন্যাপ, খন্দকার গোলাম মোর্তুজার এনডিপি, লেবার পার্টির একাংশ ও সাবেক মন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আল আজাদের বিএলডিপি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ ও লেবার পার্টির একাংশ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে ছিল।