04/24/2025 ৫ বছরে ধানের জমি কমেছে ২ লক্ষ ৭ হাজার হেক্টর
akbar hossain
১৩ জানুয়ারী ২০১৯ ১৫:৩৩
৫ বছরে ধানের জমি কমেছে ২ লক্ষ ৭ হাজার হেক্টর
আকবর হোসেন :স্টাফ রিপোর্টার
গত পাঁচ বছরে ২ লাখ ৭ হাজার হেক্টর ধানের জমি কমেছে। এই পরিমাণ জমি কমে যাওয়ার ফলে এক বছরে ১ হাজার ৫১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার ধানের ফলন কম হয়েছে।
নওগাঁ সাপাহারের বদিউজ্জামান বলেন, “কৃষির বিভিন্ন উপকরণ যেমন সার, ডিজেল ইত্যাদির দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিক খরচও বেশি। এসব খরচের পর ধানের বিক্রয় দামের সাথে তুলনা করলে খরচ উঠে না। সব মিলে শুধু ধানের উপর ভরসা করলে বিপদে পড়তে হবে। তাই ধানের জমি কমিয়ে বাগান করছি।”
নওগাঁর মো. আব্দুর রশিদ জানান, চকগৌরীতে ২ বছর আগে 'এআরবি ইটভাটা' নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন। এতে ধানের জমি ব্যবহার করেন প্রায় ৩০ বিঘা। সরকারি কোন অনুমতি ছাড়াই এটি স্থাপন করা হয়।
তিনি আরও জানান, সদর উপজেলার বর্ষাইলে ২০১১ সালে স্থাপিত মালিক মিজানুর রহমানের এইচবিসি ইটভাটা প্রায় ২০/২৫ বিঘা ধানী জমির উপর নির্মিত হয়। সরকারি ছাড়পত্র রয়েছে দাবি করলেও তা দেখাতে পারেননি ইটভাটা মালিক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ইব্রাহিম ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কারণে আবাদি সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তাদেরকে নদী ভাঙনের কারণে বার বার নতুন ঘর-বাড়িও সরাতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. আলহাজ উদ্দীন আহাম্মদ(মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) জানান, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ধানের(চাউলে) জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৫ লক্ষ ২৮ হাজার হেক্টর। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৩ লক্ষ ২১ হাজার হেক্টরে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রতি হেক্টর জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ৩.০৫ মেট্রিক টন।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউন কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম জানান, জুলাইতে প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে ধান কেনা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কমে যাওয়া জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৭ হাজার হেক্টর। এতে এক বছরে ধানের ফলন হতো ৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। এই ধান থেকে আয় হতো ১ হাজার ৫১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেন, অকৃষিখাতে জমি চলে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বসত-ভিটা বানানো। প্রভাবশালী লোকজন কৃষি জমি কিনে, পতিত রেখে দিচ্ছে। বাংলাদেশে জমি ব্যবহার নীতিমালা নেই।
তিনি আরও বলেন, এ সমস্যার সমাধানে কৃষি জমি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীন অঞ্চলে নীতিমালা তৈরি করে তা কার্যকর করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নতুন বাসস্থান, রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কিছু জমি অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কৃষি বর্হিভূত জমিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা হচ্ছে।
বিমানবন্দর, ইপিজেড নির্মাণে আইন লঙ্ঘন করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। বল প্রয়োগ করে জমি হস্তান্তর করা হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী ও ভূমি গ্রাসকারী ধনী লোকেরা। ছোট ভুমি মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমি ভাগ হতে হতে সেটি আর লাভজনক থাকছে না। তখন অপেক্ষাকৃত কম দামে ধনীরা সেটি কিনে নিচ্ছে। এই ধরনের প্রক্রিয়া ঠেকানো না গেলে জমির সঠিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। আর এই প্রক্রিয়া ঠেকানোর জন্য সকল নাগরিকের ভূমির বর্তমান মালিকানা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এই ধরনের আধুনিক প্রকল্প সরকারের আছে, তবে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ, যেখানে জনসংখ্যা বেশি জমি কম। সেখানে ভুমি ব্যবহারের বিশেষ আইন আছে। সেখানে ইচ্ছা করলেই সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না।
এই অর্থনীতবিদ আরও বলেন, আমাদের দেশেও জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার ও জমির মালিকের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অধিগ্রহণ করতে হবে। এজন্য সরকার ভূমি ব্যাংক খুলতে পারে। তাহলে ডিসট্রেস সেলিং না করে ক্ষুদ্র জমির মালিকের সুযোগ থাকবে সরকারি ভূমি ব্যাংকে জমি বিক্রি করার। সরকারেরও সুযোগ থাকবে সঠিক ব্যবহারকারীর কাছে জমি ভাড়া দেওয়ার। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে ভূমির ক্ষেত্রে বিরাজমান 'Might is Right/Market is right system' নামক নীতি আর থাকবে না। আর এটা না হলে জমির সাব-অপটিমাল ব্যবহারের ফলে অচিরেই খাদ্য সংকটসহ নানা সমস্যা দেখা দেবে।