04/21/2025 এমন দিন গেছে আশরাফের হয়ত খাবারের পয়সাও ছিল না: প্রধানমন্ত্রী
Mahbubur Rohman Polash
৩১ জানুয়ারী ২০১৯ ১১:০৩
স্টাফ রিপোর্টার
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বুধবার প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে ‘দুর্দিনের সহযোদ্ধা’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি আশরাফ আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
লন্ডনে একই সময়ে তাদের দুজনের অবস্থানের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়ে। লন্ডনে এমন একটা অবস্থার মধ্যে থাকত কখনো, এমনও অবস্থা গেছে হয়ত খাবারের পয়সাও ছিল না। লন্ডনে কাজ করত আর সেই সঙ্গে রাজনীতিও করত’।
৩ জানুয়ারি মারা যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাল ধরেছিলেন দলের। পরে দুই দফায় দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার পর সৈয়দ আশরাফ চলে যান লন্ডনে।
প্রায় দুই দশক পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে টানা চার বার কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। লন্ডনে শেখ হাসিনার নির্বাসিত জীবনের সেই সময়েও তার সঙ্গী ছিলেন সৈয়দ আশরাফ।
এসব স্মৃতি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘১৯৮০ সালে আমি লন্ডনে গিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ গড়ে তোলার কাজ করি। তখন আশরাফও আমার সঙ্গে ছিল। আমাকে বড় বোনের মতো জানত। পঁচাত্তরে আমরা স্বজন হারিয়েছি, প্রত্যেকের খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে। সততার সঙ্গে চললে পরে কষ্ট করতে হয়’।
সৈয়দ আশরাফের অর্থকষ্টের কথা বোঝাতে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা, ‘আমি যখন লন্ডনে রেহানার বাসায়, একদিন ফোন দিয়ে বলে আপা অনেক দিন বাড়ির রান্না খাই না। আমি বললাম, চলে আসো। এতই সোজা-সরল ছিল যে বলল, আসব তো ট্রেনের ভাড়া তো নেই। আমি বললাম তুমি যে কোনোভাবে আসো আমি ব্যবস্থা করব। বড় বোনের কাছে যেভাবে আবদার করে সেভাবেই আবদার করত আমার কাছে। আমার এত বেশি কাছে ছিল যে, আপন ভাইয়ের মতো দেখতাম।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশরাফ অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ছিল। রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মেধাবী ছিল। সব সময় পড়াশোনার মধ্যে থাকত। বিশ্বের কোথায় কী হচ্ছে, তার সব খবর সে রাখত। আমি তাকে লন্ডন থেকে এখানে নিয়ে এসে নির্বাচন করাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে খুব সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। জরুরি অবস্থার সময়ে দলের দুঃসময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময় সে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। আজকে যে গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি এ জন্য তার অবদান রয়েছে।”
ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফের চিকিৎসায় যথাসাধ্য চেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে চিকিৎসার খরচ যা দরকার তা দিতে পেরেছি। তার স্ত্রী যখন অসুস্থ ছিল তখনো খোঁজখবর রেখেছি। সব থেকে দুঃখজনক যে, স্ত্রী শিলা মারা গেল। তার কিছুদিন পরে আশরাফও মারা গেল। একটি মেয়ে লন্ডনে আছে। সে সেখানে চাকরি করে, তার প্রতি সমবেদনা জানাই। তার ভাইবোনদের প্রতিও সমবেদনা জানাই’।
সৈয়দ আশরাফের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিম, আমির হোসেন আমু, রওশন এরশাদ, তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম।