04/21/2025 কি কারনে জামাতের অধপতন কারন বল্লেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি
gazi anwar
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:১৮
বিভিন্ন খবর বলছে জামায়াত ভেঙ্গে নতুন করে দল গঠন হতে যাচ্ছে। এদিকে আবার দলটির সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নানা কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এর পরে জামায়াতের নানা ভুল নিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে খোলামেলা মতামত দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।
পাঠকদের জন্যে সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ-
সেই সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় এ রকম আলোচনা হচ্ছে। কোনো অফিস, আদালত সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে অনেকে মজা করে আমাকে বলে ভাই নতুন দলের খবর কী? আমার জন্য একটা পোস্ট রাইখেন। এগুলো শুনতে শুনতে আমি ধাতস্থ হয়ে গেছি। নতুন দলের উদ্যোক্তা! হিসেবে এ রকম কদর দেখে মাঝে মাঝে একটু-আধটু ভাবও ন ও আচ্ছা! তাহলে কী কথাটা সত্য নয়, শুধুই অপপ্রচার! আসলে আমার যদি যোগ্যতা থাকত, আমি যদি শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান হতাম তাহলে বহু আগেই এ রকম একটা উদ্যোগ নিতাম। আমি চাই এ রকম একটা উদ্যোগ বড়রা কেউ নিক। আমি তাদের নিবিড় সহযোগী হবো। আপনি তো ভয়ানক কথা বলছেন। জামায়াতের মতো একটা সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক দলে ভাঙন ধরানোর কথা বলছেন। না না আমি জামায়াতের কথা বলছি না। আমি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের কথা বলছি। আমি মনে করি বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি রাজনৈতিক দলও নেই যারা বাংলাদেশে সুশাসন উপহার দিতে পারে। যারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার-এর ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে। জামায়াত তো এ উদ্দেশ্যেই কাজ করছে এবং সৎ ও যোগ্য লোক তৈরির মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে একটি সুন্দর দেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই জামায়াত চেষ্টা করছে। শুধু জামায়াত নয়, আরও অনেকেই চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে এখনও যতটুকু আশা বেঁচে আছে তা সেসব প্রচেষ্টারই ফল। কিন্তু শুধু চেষ্টা করলেই তো হবে না। চেষ্টার সঙ্গে কর্মকৌশল, কর্মনীতি, যথা সময়ে প্রয়োজনীয় চিন্তা ও সিদ্ধান্তের সমন্বয় না ঘটলে সে চেষ্টা একসময় পথ হারিয়ে ফেলে। কখনও কখনও অনিশ্চয়তায় নিপতিত হয়। বহু নবী বিজয় অর্জন করতে পারেননি। চেষ্টা করতে করতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পথে তাঁরা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু সর্বশেষ নবী এবং রাসূল (সা.) বিজয় অর্জন করেছিলেন। আল্লাহ্র বিধান প্রতিষ্ঠিত করে প্রমাণ করেছিলেন ইসলাম কীভাবে সমতা, শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে। জামায়াতের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য রাসূল (সা.) এর অনুরূপ। জামায়াত যে চেষ্টা করছে তাতে উদ্দেশ্য পূরণ হবে হয়তো কিন্তু লক্ষ্য যদি অর্জিত না হয় তাহলে সমাজ ও ইতিহাস আমাদের ব্যর্থই ভাববে। তাহলে আপনি মনে করেন বাংলাদেশে আপনারা জামায়াতের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন? হ্যাঁ মনে করি। তবে এই ব্যর্থতার একটা বড় দায়ভার জামায়াতের বিরোধীদের। জামায়াতকে সর্বক্ষেত্রে, সর্বদিক দিয়ে নির্মূল করার যে চেষ্টা সে চেষ্টায় তারা ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। আমরা সে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার মোকাবিলা করতে পারিনি বরং দু’টি মেজর মিসটেক নিয়ে আমরা দীর্ঘ সংগ্রামী পথ পাড়ি দিয়েছি। একটি আদর্শগত তাত্ত্বিক ভুল অন্যটি রাজনৈতিক ভুল।
দায়িত্বশীলদের ঘর-বাড়ি, অফিসে এসবের মাত্রা আরও বেশি। কিন্তু ফোরামের পরিবেশ খুব বিশুদ্ধ, উখুয়াতে পরিপূর্ণ। আবেগ আর কান্নার রোলে সেখানে শুধুই পবিত্র বন্ধনের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিহুম্ (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) বুঝতে পারলাম। কিন্তু এবার বলেন, আপনাদের রাজনৈতিক মেজর মিসটেক বা ভুলটা কী? রাজনৈতিক বড় ভুল হলো- বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আমাদের অস্বচ্ছ- বিভ্রান্তিকর অবস্থান। সেটা কী রকম? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াত অংশ নেয়নি বরং বিরোধিতা করেছে। এই বিরোধিতা করে জামায়াত কী সঠিক করেছে? না ভুল করেছে? দলীয়ভাবে এ বিষয়টি তারা এখনো সুরাহা করতে পারেননি। ভুল শুদ্ধের সুরাহা না করেই জামায়াত বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতায় বিভিন্ন কথা বলেছে। মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাদের বিবেচনায় শেখ মুজিব ছিলেন ‘ষড়যন্ত্রকারী’ ‘দেশদ্রোহী’ এবং মুক্তিযাদ্ধারা ছিলেন ‘ভারতের দালাল’। একই নেতৃবৃন্দের কাছে আমরা কখনো শুনি “মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের ভূমিকা ছিল আবেগ নির্ভর ও বাস্তবতা বিবর্জিত” আবার কখনো তাঁরা বলেন- “৭১-এ আমরা যে ভূমিকা নিয়েছিলাম তা যে সঠিক ছিল তা এখন জাতি বুঝতে পারছে”!
মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আমাদের মুরব্বীদের মুখ থেকে দুই ধরনের পাঠ পাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এতে বোঝা যায় তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে একবার একরকম বলছেন। দলের সুস্পষ্ট কোনো স্ট্যান্ড নেই। ফলে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে এ প্রশ্ন জাগাটা খুবই স্বাভাবিক যে, মুক্তিযুদ্ধ কে সমর্থন না করাটা যদি সঠিক হয়, তাহলে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস পালন কীভাবে সঠিক হয়? হ্যাঁ জামায়াত যদি ৭১ সালের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতো, ক্ষমা চাইতো এবং সবার আগে আমাদেরকে অর্থাৎ দলীয় কর্মীদের কে সে বিষয়ে দীক্ষা দিত তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। আমাদের কে জানানো হয়েছে শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি। তিনি স্বেচ্ছায় পাকিস্তানিদের হাতে ধরা দিয়েছিলেন। কিন্তু আবার জনসম্মুখে চাপে পড়ে বলা হচ্ছে শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা! ফলে আমাদের সকল রাজনৈতিক অর্জন এই এক ক্ষেত্রে এসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গ এলে রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এমন কোনো গালি নেই যা আমাদের দেয়া হয় না। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে এবং নেতৃত্বের দোদুল্যমানতায় অযথা আমরা সমাজের ২য় শ্রেণির নাগরিক হয়ে আছি। আপনি কী মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে ক্ষমা চাইলে জামায়াতের রাজনীতি সবাই গ্রহণ করে ফেলবে? না আমি ক্ষমা চাওয়া আর ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে সবার রাজনীতি গ্রহণ করার কথা বলছি না। জামায়াত ভুল করেছে না শুদ্ধ করেছে সেটা আগে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করার কথা বলছি। আপনি যদি ভুল করে থাকেন আর সেটা স্বীকার না করে নানা ধানাই-পানাই করে যুক্তি দেন তাহলে সেটা কখনোই আপনি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। এটা ইসলামিক পদ্ধতিও নয়। বরং এতে আপনার বিরুদ্ধ প্রচারণাটাই প্রতিষ্ঠা পাবে। আর যদি আপনার ভূমিকা হায় সঠিক, ন্যায়ানুগ এবং যুক্তিপূর্ণ কিন্তু আপনি পরিস্থিতির কারণে সুবিধা পাওয়ার জন্য বলেন না আমি ঠিক করিনি, আবেগ নির্ভর ছিল বা ভুল ছিল-সেটা আরো মারাত্মক। এই অস্পষ্টতা, দ্বৈতাচরণ আপনাকে আদর্শিকভাবে শূন্য বানিয়ে ফেলবে। -তাহলে জামায়াত এখন কী করবে? আপনাদের যাদের ভিন্নমত তাঁরাই বা কী করবেন? দেখুন আমি রাজনীতি থেকে এখন অনেক দূরে। আমি আমার দলের একটি ক্ষুদ্র ইউনিটেরও দায়িত্বশীল নই। এই দলের ভাঙন তো দূরের কথা আমার কথায় দলের সামান্য সুতাও নড়বে না।
আমি আমার ওজন ও সামর্থ্য বুঝি। বিভিন্ন পেশা ও মতের মানুষদের নিয়ে কিছু ইনটেলেকচুয়াল গ্রুপ আছে যেখানে সমাজ রাজনীতি নিয়ে ডিস্কাশন হয়। আমি সে রকম কয়েকটির সদস্য। একটির মডারেটর আমি নিজে। সেখানে রাজনীতির রূপান্তর, কার কী ভবিষ্যৎ, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন কীভাবে সম্ভব এসব নিয়ে আলোচনা হয়। আমার কাজ আলাপ-আলোচনা, ফেসবুকিং, আড্ডা এগুলোতেই সীমাবদ্ধ। যারা আমার সাথে কথা বলতে চায় তাদের সাথে কথা বলি। পেশাগত কাজে এদিক সেদিক যাই। কোন দাওয়াতে গেলে ছোট খাট মিটিং হয়ে যায়। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার অধিকার আল্লাহ্তায়ালার প্রদত্ত অধিকার। আত্মসমলোচনা, বৈরী পরিবেশেও হক কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এসব অনুপ্রেরণা আমি সংগঠন থেকে শিখেছি। আমি বিশ্বাস করি সংস্কার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এর পথ বড্ড প্রতিকূল। পথভ্রষ্ট, দালাল, মুনাফেক, সংস্কারবাদী, সুবিধাবাদী, ভীরু, দলে ভাঙন সৃষ্টিকারী, ষড়যন্ত্রকারী, গ্রুপিং সৃষ্টিকারী, শৃঙ্খলা বিরোধী ও বিনষ্টকারী…… এ রকম বহুমাত্রিক গালি-অপবাদ তাদের পাথেয়। দলে তাদের ঠাঁই হয় না। শৃঙ্খলা রক্ষা, দলের ঐক্য অটুট রাখার স্বার্থে তাদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়। তাদের দল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু এরপরও কী দল অটুট থাকে? সংস্কারের দাবি তিরোহিত হয়? হয়না। দমননীতি আর অপবাদ দিয়ে সংস্কার আর পরিবর্তনের পথ রোধ করা যায় না।