04/22/2025 গোটা কাশ্মীর এখন ক্রোধে ফুঁসছে।
odhikar patra
৮ আগস্ট ২০১৯ ০৬:২২
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ধারা বিলোপের দুদিন পরও কাশ্মীর কার্যত বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। তার মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
ভারত শাসিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের একদিন আগে রোববার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের। বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ, দোকানপাট, হাটবাজারসহ সমস্ত কিছু। কাশ্মীরের জনগণ মূলত গৃহবন্দি হয়ে আছে। এক কথায় বলতে গেলে গোটা ভূস্বর্গই যেন আজ কারাগার। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেনি তাদের ক্ষোভ। গোটা কাশ্মীর এখন ক্রোধে ফুঁসছে।
এ সম্পর্কে বিবিসি হিন্দির একজন সাংবাদিক টেলিফোনে জানান, শ্রীনগর এবং কাশ্মীরের উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সরকারিভাবে এসব খবরের কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
রাস্তায় সর্বত্র হাজার হাজার সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী টহল দিচ্ছে। সকল রাস্তা বন্ধ। সবখানে জারি হয়েছে কারফিউ। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। ল্যান্ড ফোন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এখন কাশ্মীরে একজনের সাথে আরেকজনের যোগাযোগ করার কোন উপায়ই নেই।
বিবিসির সাংবাদিক আরো জানান, ‘আমরা শ্রীনগরে আছি, কিন্তু কাশ্মীরের অন্য জায়গায় কি হচ্ছে তা জানার কোন উপায় নেই। কারণ কোন যোগাযোগ নেই। বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন হয়েছে এবং তারা সবকিছু চেক করছে। পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে কে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে – সবকিছু চেক করা হচ্ছে।’
শ্রীনগর এবং কাশ্মীরের উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ এবং পাথর ছোঁড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সরকারিভাবে এসব খবরের কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায় নি। তবে আগামী কয়েক দিনে হয়তো কি হচ্ছে তা আরেকটু ভালোভাবে জানা যাবে।
সবখানেই উত্তেজনা। লোকজন ক্ষুব্ধ। তারা এখনো বুঝতে চাইছে কী ঘটছে, কী ঘটতে যাচ্ছে, তাদের ভাগ্যে কী আছে।
সামনে ঈদ আসছে। মনে করা হচ্ছে ভারত সরকার তখন সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নেবে – যাতে লোকজন উৎসবের আগে কেনাকাটা করতে পারে। তবে বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে ঈদের সময় বাড়ির বাইরে এসে নামাজ পড়ার অনুমতি মেলে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান কাশ্মীরি জনগণ।
তবে উপত্যকায় আগামী দিনগুলোতে সহিংসতা যে আরো বাড়বে সে ব্যাপারে কারোই কোনো সন্দেহ নাই। আর কাশ্মীরি জনগণের এই ক্ষোভকে যে ভারতীয় সেনারা বন্দুকের নল দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করবে সেটাও নিশ্চিত। এতে ঝরে পড়বে আরো বহু নিরীহ প্রাণ, যদিও এতে মোদি সরকারের কিছু যায় আসে না। কারণ তাদের দরকার কাশ্মীরের মূল্যবান ভূখণ্ডটি, সেখানে হিন্দুত্ববাদ কায়েম করা। তাই এখানকার জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্বই নেই এই হিন্দুবাদী সরকারের।
এদিকে কাশ্মীরের যোগাযোগ এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যে সেখানকার অনেক লোকই এখনো ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের খবর জানেন না। তবে যারা জানতে পেরেছেন তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না খবরটা। সেখানকার অধিকাংশ লোকই বলেছেন, তারা আরো খবরের অপেক্ষায় আছেন, কারণ সবার কথা তারা বিশ্বাস করেন না।
তবে একজন পঞ্চাশোর্ধ বয়সী এক লোকের কথা বলেন বিবিসি সাংবাদিক। ওই লোক তাকে বলেন, আগে তারা নিজেদের স্বাধীন ভাবতেন, কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে সেই স্বাধীনতা তারা হারিয়ে ফেলেছেন। তারা ভারতের গোলামে পরিণত হয়েছেন।