শাহ ফয়সাল
দিল্লি বিমানবন্দরে আটক করা হয় শাহ ফয়সালকে

ভারত শাসিত কাশ্মীরের একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদকে, যিনি আগে কূটনীতিক ছিলেন, দিল্লিতে গ্রেফতার করে কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।

শাহ ফয়সালকে বুধবার দিল্লি বিমানবন্দরে আটক করা হয়। সেসময় তিনি একটি বিমানে উঠতে যাচ্ছিলেন।

কাশ্মীর অঞ্চলে আটক অবস্থায় রয়েছে শত শত নেতা, ঐ তালিকায় যুক্ত হলেন শাহ ফয়সালও।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই এসব নেতাদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করা হয়।

ভারতের কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে বিতর্কিত ঐ অঞ্চলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ধরণের অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে তাদের।

হাজারো কাশ্মীরির বিক্ষোভের ওপর পুলিশের ছররা গুলি
হাজারো কাশ্মীরির বিক্ষোভের ওপর পুলিশের ছররা গুলি

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ায় ভারতের সমালোচনা করেছে পাকিস্তান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার ফলে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে তার জন্য দায়ী থাকবে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বুধবার দিল্লি থেকে তুরস্কে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি বিমানে ওঠার সময় গ্রেফতার হন শাহ ফয়সাল।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের কোন অঞ্চলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

তবে স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে বলা হচ্ছে তাকেও গৃহবন্দী করা হয়েছে। কিন্তু বিবিসি এই তথ্য যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।

মঙ্গলবার বিবিসি'র হার্ডটক অনুষ্ঠানের সাথে কথা বলার সময় মি. ফয়সাল গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, "আমি লজ্জিত যে, এমন একটা সময় আমি বাইরে রয়েছি যখন কাশ্মীরের সব নেতাই আটক রয়েছেন।"

ঐ অনুষ্ঠানে মি. ফয়সাল বলেছিলেন যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে মি. মোদী 'প্রকাশ্য দিবালোকে সংবিধানকে হত্যা করেছেন।'

তবে ভারত সরকার বলছে তারা সাংবিধানিক নিয়ম অনুসরণ করেই সব পদক্ষেপ নিয়েছে।

২০০৯ সালে ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে প্রথমবার আলোচনায় আসেন শাহ ফয়সাল। প্রথম কাশ্মীরী হিসেবে তিনি ঐ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।

এবছরের জানুয়ারি মাসে তিনি তার সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন নিজের রাজনৈতিক দল, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট, গঠনের জন্য।

কাশ্মীরে রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও অ্যাক্টিভিস্ট, শিক্ষক এবং ব্যাবসায়ীদেরও আটক করা হয় অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের আগে এবং পরে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য

১৫ই অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী; যেখানে তিনি সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অপসারণকে তার সরকারের বিশেষ একটি অর্জন হিসেবে দাবি করেন।

মি. মোদী বলেন, সংবিধানের যেই অনুচ্ছেদটি গত ৭০ বছর ধরে কাশ্মীরিদের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আসছিল, সেটির কারণেই কাশ্মীরের মানুষ তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিলেন।

এর আগে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর প্রথম বক্তব্যে মি. মোদী বলেছিলেন, "ওই দুটি ধারার কারণে সেখানে এতবছর ধরে সন্ত্রাসবাদ, পরিবারতন্ত্র আর দুর্নীতি ছাড়া আর বিশেষ কিছু হয়নি।"

"তিন দশকে ৪২ হাজার নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেছে। ভারতের অন্য সব নাগরিক যেসব অধিকার ভোগ করতেন, সেগুলোর অনেকগুলি থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকরা বঞ্চিত ছিলেন।"