05/12/2025 বাবরি মসজিদের ৫০০ বছরের ইতিহাস
Mahbubur Rohman Polash
৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:২৬
ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলা বা অযােধ্যা মামলার রায় ঘােষণা করা হয়েছে আজ। রায়ে বাবরি মসজিদের জমিটা হিন্দুদের দেওয়া হয়েছে। ৭০ বছর ধরে বাবরি মসজিদকে ঘিরে মামলা চলছিল। ভারতের রাজনীতির একটা বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করেই। আর বাবরি মসজিদের ইতিহাস ৫০০ বছরের পুরনাে।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক, বাবরির ইতিহাস১৫২৮ মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেন।
১৮৮৫- ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে চাঁদোয়া টাঙ্গানাের আবেদন জানান মহান্ত রঘুবর দাস। আদালতে আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
১৯৪৯- বিতর্কিত ধাঁচের মূল গম্বুজের মধ্যে নিয়ে আসা হয় রাম লালার মূর্তি। ১৯৫০ রামলালার মূর্তিগুলির পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন কনােন গোপাল শিমলা
১৯৫০- মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস। ১৯৫৯ওই স্থানের অধিকার চেয়ে মামলা করেন নির্মোহী আখড়া। | ১৯৬১ একই দাবি জানিয়ে মামলা করে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বাের্ড। ১৯৮৬ ফেব্রুয়ারি ১, স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
অযােধ্যা রামজন্মভূমির রামলালা বিরাজমনের নিকট বন্ধু তথা এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবী নন্দন আগরওয়ালের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে।
১৯৮৯- ১৪ আগস্ট, এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। ১৯৯০ ২৫ ডিসেম্বর- বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি গুজরাটের সােমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেন।
৬ ডিসেম্বর- ১৯৯২- করসেবকরা বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দেয়। ৩ এপ্রিল ১৯৯৩ অযােধ্যার জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিতর্কিত এলাকার অধিগ্রহণ আইন পাস হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই আইনের বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন জমা পড়ে। সংবিধানের ১৩১ এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই রিট পিটিশন বদলি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, যা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।
২৪ এপ্রিল- ১৯৯৪- সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকি মামলায় রায়ে জানায়, মসজিদ ইসলামের অন্তর্গত ছিল না।
২০০২ এপ্রিল বিতর্কিত স্থলের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২০০৩, ১৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বলে, অধিগৃহীত জমিতে কোনও রকমের ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না।
১৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।
২০১০ ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেয়, বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেওয়া হােক। এই রায়ে তিন বিচারপতি সহমত পােষণ করেননি।
২১ ভিত্তিতে রায়লান হয়। ২০১১- ৯ম- অযােধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘােষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৬ ২৬ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
২০১৭ ২১ মার্চ প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর যুযুধান পক্ষগুলিকে আদালতের বাইরে সমঝােতার প্রস্তাব দেন। ৭ আগস্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কের সালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট।
৮ আগস্ট – উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বাের্ড সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিতর্কিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিল বানানাে যেতে পারে। ১১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত জমির ব্যাপারে সদর্থক মধ্যস্থতার জন্য দু’জন অতিক্তি জেলা বিচারককে ১০ দিনের মধ্যে মনােনয়ন করতে হবে।
২০ নভেম্বর উত্তর প্রদেশের সিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বাের্ড সুপ্রিম কোর্টকে বলে, অযােধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানাে যেতে পারে।
১ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন ৩২ জন নাগরিক অধিকার রাক্ষা কর্মী।
‘৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
১৪ মার্চ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী-সহ সকল অন্তর্বর্তী আবেদন (যারা এই মামলার পক্ষ হতে চেয়েছিল) নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট। ৬ এপ্রিল, ১৯৯৪ সালের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালেন রাজীব ধাওয়ান।
২০ জুলাই- সুপ্রিম কোর্ট রায়দান স্থগিত রাখল।
২৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট জানানাে হল, ২৯ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানি হবে নবগঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চে। ২৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যথাযথ বেঞ্চে মামলার শুনানি স্থির করল, ওই বেঞ্চই শুনানির দিন ধার্য রবে। ২৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিল, এ সম্পর্কিত সমস্ত আবেদনের শুনানি হবে ৪ জানুয়ারি থেকে। ২০১৯ ৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাদের তৈরি করা যথােপযুক্ত বেঞ্চ মামলার শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি ছিন্ন করবে।
৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চও ঘােষণা করে। শীর্ষে রাখা হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। এ ছাড়া। বেথের অন্য বিচারপতিরা হলেন এস এ বােসে, এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
১০ ফানুয়ারি বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ২৯ জানুয়ারি নতুন নেপেৰা সামনে মামলার শুনানি শুরু করতে। ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে। নতুন বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচাপতি এসএ বােৰলে, ডিওয়াই চন্দ্ৰহড়, অশােক ভূষণ এবং এস এ নাজির । ২৯ জানুয়ারি- কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবার আবেদন জানায়।
২০ ফেব্রুয়ারি- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলার শুনানি শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার কথা বলে, আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের কাজে লাগানাে হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য ৫ মার্চ দিন স্থির হয়।
৬ মার্চ জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কিনা সে সম্পর্কিত রায় কান মুলতুবি রাখে সুপ্রিম কোর্ট। ৯ এপ্রিল নির্মোহী আখড়া কেন্দ্রের জমি ফেরানাের আবেদনের বিরােধিতা করে। ৯ মে তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিম কোর্টে তাদের অন্তর্বর্তী রিপাের্ট জমা দেয়।
১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলে, ১ আগস্ট রিপাের্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়। ১ আগস্ট মধ্যস্থতা সংক্রান্ত রিপাের্ট বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে। ৬ আগস্ট, সুপ্রিম কোর্ট জমি মামলায় দৈনিক ভিত্তিতে শুনানির কথা জানায়। ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়, রায়দান মুলতুবি রাখা হয়।
২০১৯ ৯ নভেম্বর- অযােধ্যা মামলায় সুপ্রিম রায় ঘােষণা। বাবরি মসজিদের জমি পাবে হিন্দুরা। মসজিদ নির্মাণের জন্য, মুসলিমদের দেওয়া হবে বিকল্প জমি।