04/19/2025 ডেঙ্গুর সংক্রমণ যৌন মিলনে!
odhikar patra
১১ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:১৫
ডেঙ্গু সংক্রমণের এই পদ্ধতিকে ‘অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত’ হিসেবে বর্ণনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (ইসিডিসি) বলছে, ঘটনা সত্যি হলে এটা হবে পুরুষে-পুরুষে যৌন মিলনে ডেঙ্গু ছড়ানোর প্রথম ঘটনা।
গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে স্টকহোমভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, গত সেপ্টেম্বরে মাদ্রিদ পৌর এলাকার দুই পুরুষ বাসিন্দার মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার খবর দিয়েছে স্পেন, যাদের পরস্পরের মধ্যে যৌন মিলন হয়েছিল।
এদের মধ্যে সর্ব সম্প্রতি আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি স্পেনের বাইরে যাননি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তার মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা যায় এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু নিশ্চিত হয়।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে তার পুরুষ সঙ্গীর মধ্যে একই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, যাকে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এই ব্যক্তি অগাস্টে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে কিউবা ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে গিয়েছিলেন।
মাদ্রিদ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা সুজানা জিমেনেজকে উদ্ধৃত করে দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪১ বছর বয়সী ওই পুরুষের পুরুষ সঙ্গী কিউবা ভ্রমণে গিয়ে মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
ইসিডিসির এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে সর্ব সম্প্রতি আক্রান্ত জনের সংক্রমণকে ‘অটোচথনাস (স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট)’ হিসাবে ও আগের জনের ঘটনাকে ‘আমদানিকৃত’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
আক্রান্ত ওই দুজনের বাসস্থান ও আশেপাশের এলাকায় পতঙ্গতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে নেতিবাচক ফল পেয়েছে স্পেন। অর্থাৎ সেখানো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক এইডিস (এইডিস অ্যালবাপিক্টাস) মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে উভয় ব্যক্তির ভাইরাসের জীবতাত্ত্বিক ধরণ অভিন্ন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আরও তদন্ত করে ভাইরাসটি কিউবায় বিস্তৃতি পাওয়া ডেঙ্গু ভাইরাসের মতোই বলে প্রমাণ পেয়েছেন স্পেনের গবেষকরা।
স্পেনে পর্যালোচনা তুলে ধরে ইসিডিসি বলছে, বাহকের মাধ্যমে সংক্রমণ বা ডেঙ্গুর সংক্রমণের জ্ঞাত অন্য মাধ্যমের সমর্থনে কোনো ডেটা না থাকায় ‘অটোচথনাস’ ঘটনাটিকে সম্ভাব্য ‘যৌন সংক্রমণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্পেনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এমএসএমের (পুরুষে পুরুষে যৌন মিলন) মাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা কোনো লেখায় তারা পাননি। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় যৌন মিলনের মাধ্যমে এক নারীর কাছ থেকে এক পুরুষ সংক্রমিত হওয়ার একটি ঘটনার সন্ধান তারা পেয়েছেন।
মাদ্রিদের কর্মকর্তা সুজানা বলেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কে সম্ভাব্য ডেঙ্গু সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ইউরোপের সংস্থাটির নিজের মূল্যায়ন হলো- এমসিএমের মধ্যে নিশ্চিতভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনও ঘটনা তাদের জানা নেই। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ পদ্ধতি অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত।
বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। এবারই প্রথম ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় এই রোগ ছড়িয়েছে।
এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক মানুষ মারা গেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, এ বছর ১০৭টি মৃত্যু নিশ্চিতভাবে ডেঙ্গুতে হয়েছে। এই সংখ্যাও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড।
মূলত এইডিস এজিপ্টি মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এই মশা ক্রান্তীয় বা উপ- ক্রান্তীয় এলাকায় বসবাস করে; ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পছন্দ করে।
বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটির বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়; মারা যায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
চলতি বছরের শুরুতে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, আগামী ৬০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়বে।